অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ: খোঁজ নেই মালিকপক্ষের
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের মালিক কর্তৃপক্ষের কোনও খোঁজ নেই। বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস পায়নি স্থানীয় প্রশাসন।


বিবিএস নিউজ ডেস্ক: শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনকারী সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অবস্থান সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় শনিবার রাত পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২২ জন।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি গড়ে তোলা হয়েছিল, সেখানে সরু সড়কের দুই পাশে ৮-১০টি স্টিল রি-রোলিং মিল, তেলের রিফাইনারিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানার পাশাপাশি বসতবাড়িও ছিল। বিস্ফোরণের পর এলাকাটি রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের কারখানা, বসতবাড়ি। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্ল্যান্ট প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিলিন্ডার, লোহার টুকরো, ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে তিনটি ট্রাক। কারখানা থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে গিয়ে পড়ে রয়েছে লোহার টুকরো।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি হামিদ মিয়া বলেন, ‘গত বছর বিএম ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এখানেও বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।’
দুর্ঘটনাকবলিত প্ল্যান্টটিতে উৎপাদন করা হতো অক্সি-এসিটিলিন গ্যাস। এটি মূলত শিল্পে ব্যবহার করা অক্সিজেনের প্ল্যান্ট। অক্সি-এসিটিলিন গ্যাসের শিখা দিয়ে লোহার পাত কাটা হয়। একই সঙ্গে রি-রোলিং মিলে লোহা গলাতে ব্যবহার করা হয়। আশপাশের জাহাজভাঙা শিল্প ও স্টিল রি-রোলিং মিলে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে।
এ কোম্পানির মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপের জাহাজ ভাঙা শিল্প ও রি-রোলিং মিলও রয়েছে।
জানা গেছে, জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি কারখানাটি গড়ে তোলেন। তার মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে মামুন উদ্দীন, আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন কোম্পানিটি চালাচ্ছেন।
মামুন উদ্দীন এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সীতাকুণ্ডের জাহানাবাদে এস ট্রেডিং নামে তাদের শিপইয়ার্ড রয়েছে। বানু বাজার এলাকায় সীমা স্টিল রি-রোলিং মিল নামে তাদের মালিকানাধীন আরেকটি কারখানা রয়েছে।
ঘটনার পর মোবাইল ফোনে মামুন উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। হতাহত শ্রমিকদের সহায়তার বিষয়ে মালিকপক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি।’
সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান শেষ ঘোষণা করার পর ও ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে এবং হতাহতদের তথ্য নিয়ে মামলা করা হবে। মালিকপক্ষের কোনও গাফিলতি আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।