রাজনীতি

অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে: বিএনপি

প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি অভিযোগ করেছে— মহাবিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ, দেশের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই বরং সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকটি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে।

বিবিএস নিউজ ডেস্ক: মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার মাশুল দিতে গিয়ে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ও নিদারুণ আর্থিক সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

এতে মির্জা ফখরুল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, রিজার্ভ ও ডলার সংকট, অর্থপাচার, আইএমএফফের ঋণ প্রসঙ্গসহ নানা ইস্যুতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশে চারদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেনো এক ‘নাই’-এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই হাহাকার অবশ্য সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। সেই কুখ্যাত গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দেদারছে অর্থ লোপাট করছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। অর্থপাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অপরদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘১৩ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০০ দশমিক ৮০ শতাংশ। বলা হয়েছিল, জরুরি পরিস্থিতিতে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াবে। কিন্তু কোনও জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই বিইআরসি’কে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়া এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি। সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে। অর্থাৎ, দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।’

বিএনপির অভিযোগ, সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ -এর কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছে, তার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বন্ধের অংশ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর সরকারি হিসাব মতে, রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৩২.৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। কিন্তু আইএমএফ -এর হিসাবে এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয় বিধায় রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৪.৫৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলারে। বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘ডলারেরসঙ্গেটাকার ম‚ল্যমান রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। কৃত্রিমভাবে টাকার শক্তিশালী অবস্থান দেখিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে চলছিল সরকার। কিন্তু সেই ভ্রান্ত মদ্রানীতির অসারতা উদগ্রভাবে উন্মোচিত হয়ে আজ দেশ চরম ডলার সংকটে নিপতিত হয়েছে। একদিকে দেশে তীব্র ডলার সংকট, অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশে চরম ডলার ক্রাইসিস চলছে। এর ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন অচলাবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। বর্তমানে এক রকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যের শেষ দিকে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত’ এর ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি’র নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দূরীভূত করা সম্ভব হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button