জাতীয়

আগামী জুনে উদ্বোধন : মাত্র ৩ ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছে দেবে রেল যাত্রায়

আগামী জুনে উদ্বোধন : মাত্র ৩ ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছে দেবে রেল যাত্রায়

জেমস আব্দুর রহিম রানা:
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রেললাইন স্থাপন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে, যার অপেক্ষায় দিন গুনছে এ অঞ্চলের কোটি মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রাথমিকভাবে তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলের অপারেশন বিভাগ। তবে প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের।

এই রেললাইন চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১ কোটি মানুষ সরাসরি উপকার পাবেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সুবিধা পাবেন এ অঞ্চলের কৃষিজীবীরাও।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রেললাইন প্রকল্পের যশোর অংশের কাজ এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। বিভিন্ন স্থানে স্টেশন নির্মাণ, রেললাইন স্থাপন ও সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রুট চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। খুলনা ও বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী ট্রেনও এ রুট ব্যবহার করবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগেও এর ব্যবহার হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের উপশাখা হিসেবেও কাজ করবে এই রুট। এখন খুলনা, যশোর, বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু) হয়ে ঢাকায় যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এই রুট চালু হলে খুলনা, যশোর ও বেনাপোল থেকে তিন ঘণ্টায় রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে রেললাইন স্থাপনসহ ১৪টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৬টি বড় সেতু, ২৪৪টি ছোট সেতু এবং ৩০টি রেল ক্রসিং গেটও তৈরি হচ্ছে। এই রেল সংযোগ যশোরের রূপদিয়া থেকে জামদিয়া, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী, মহেশপুর, মুকসুদপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার শারাফত হোসেন গনমাধ্যামকে জানান, প্রকল্পের যশোর সেকশনের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হবে, তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে যশোর-খুলনার মানুষ ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে একদিনেই ফিরে আসতে পারবেন।

পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে শুরুতে আমাদের দুই থেকে তিনটা ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। আমরা আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’

রেলওয়ের অপারেশন বিভাগ সূত্র জানায়, খুলনা থেকে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় চলাচল করে। এর মধ্যে একটি ট্রেন খুলনা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাবে। আরেকটি বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে।

এই বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনও ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবে। তা ছাড়া রাজশাহী থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করে মধুমতি এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটিকেও রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ শুরুতে পদ্মা সেতু দিয়ে এই তিনটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে অপারেশন বিভাগ।

ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটি পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে চেপে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়া যাবে। এখন সেতুতে বাণিজ্যিক ট্রেন চলার অপেক্ষা মাত্র।

আগামী জুনে উদ্বোধন : মাত্র ৩ ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছে দেবে রেল যাত্রায়
আগামী জুনে উদ্বোধন : মাত্র ৩ ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছে দেবে রেল যাত্রায়

এদিকে গত জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো পথে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে। এর আগে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।’

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার পথে রেললাইন বসানোর বেশির ভাগ কাজ শেষ। জুরাইনের দেড় কিলোমিটার এবং এলিভেটেড অংশে কিছু রেললাইন বসতে বাকি আছে। এদিকে প্রকল্পের তৃতীয় অংশে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ৮৭ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে জুন মাস থেকে।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো পথে থাকছে ২০টি রেলস্টেশন। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে রেললাইন চালু হলে প্রথম দফায় তিনটি স্টেশন চালু হতে পারে। সেই তিনটি স্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে। স্টেশনগুলো হলো নিমতলা, মাওয়া এবং পদ্মা রেলস্টেশন। তবে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ট্রেন চালু হলেও সিগন্যালিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে সিগন্যালের কাজ হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত সিগন্যালিংয়ের লাইন আছে। ট্রেন চালুর আগে নিমতলা স্টেশন পর্যন্ত সিগন্যালিংয়ের কাজ শেষ হতে পারে। অর্থাৎ বাকি অংশে সিগন্যাল রেডি হবে না। ওই অংশে ট্রেন থ্রু-পাস করা হবে।

তবে কাজ যেহেতু পুরোপুরি শেষ হবে না, তাই ট্রেন চলাচলে প্রকল্পের কাজে কিছুটা সমস্যা হয়ে পারে। পুরো পথে ট্রেন পরিচালনা করার জন্য প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনবল দরকার, যা এখনো অনুমোদন দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য বলছে, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮০ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ ভাগ। এই অংশে ৩৯ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার রেললাইন বসবে।

এদিকে ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ ভাগ। এই অংশে এমব্যাংকমেন্টে নির্মাণ হবে ৮৩ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। যার অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ১২ ভাগ।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মেইন লাইন বসানো হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার, লুপ ও সাইডিং লাইন আছে ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার এবং ডাবল লাইন ৩ কিলোমিটারসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। ২৩ দশমিক ৩৭৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১ দশমিক ৯৮ র‍্যাম্প, ৫৯টি মেজর ব্রিজ, ২৭২টি মাইনর ব্রিজ (কালভার্ট আন্ডারপাস), ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠানো নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ (সিবিআই) সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ১ হাজার ৪২৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে ২০১৬ সালের জুনে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি আধুনিক ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ বা কোচ কেনা হয়েছে। এগুলো নির্মিত হয়েছে চীনে। একদিকে রেলপথ নির্মাণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে চীন থেকেও চলে এসেছে কোচ।

কোচ কেনার প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ছয় ধাপে চীন থেকে কোচগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ১৩ জুন শেষ ধাপের কোচের চালান চলে এসেছে। ফলে আমাদের হাতে এখন ১০০ কোচ রয়েছে, যা দিয়ে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালানো যাবে।’
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলরুট চালু হলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যে পরিবহন খরচ ও সময় অনেক কমে যাবে। যশোর-খুলনা অঞ্চল মূলত কৃষি প্রধান। দেশের সবজি, ফুল এবং রেণু পোনার বড় একটি অংশ যশোরে উৎপাদন হয়। ট্রাকে এসব পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার সময় ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়, সময় নষ্ট হয়। পচনশীল পণ্য অনেক সময় রাস্তায়ই পচে যায়। এই রেল সংযোগ চালু হলে তিন ঘণ্টায় এ অঞ্চলের কৃষি পণ্য ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে পরিবহন খরচ যেমন কমবে। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হবে না। পণ্য নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না। ভোক্তারাও এর সুবিধা পাবেন।

এদিকে গত বছরের ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সেই সাথে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শরীয়তপুর পযর্ন্ত শুরু হতে যাচ্ছে রেল চলাচল। প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করবে রেল। ইতিমধ্যে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলছে ৪টি স্টেশন ও ভাঙ্গা জংশনের নির্মাণকাজ। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশে শেষ হয়েছে ব্রডগেজ রেলপথ বসানোর কাজ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মূল সেতুর ওপর ৬.১৫ কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তের ৪.০৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের পাথরবিহীন রেলপথ ঢালাই কাজ। সড়ক পথের পর রেলপথ উন্মুক্ত হতে যাওয়ায় খুশি দক্ষিণের মানুষ। তবে রেল সুবিধার আওতায় না আসায় আক্ষেপ রয়েছে শরীয়তপুরের মানুষের।

নির্মাণাধীন ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন ঘুরে দেখা গেছে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচল এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে এ রুটে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙ্গায় রেল জংশন নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা রেলস্টেশনে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত টেস্টরান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

নির্মাণাধীন জংশন ভবনের কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি ফলক অনুযায়ী জংশন ভবনের আয়তন হচ্ছে ৪ হাজার ৯৯৮ বর্গমিটার। এটি হবে দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক জংশন ভবন। জংশন ভবন এলাকার বাসিন্দা কৃষক মেহের আলী মুন্সী (৭০) বলেন, কোনো দিন ভাবিনি এখান দিয়ে রেল চলাচল করবে। এক সময় জংশন এলাকায় কিছু বাড়িঘর ও ডোবা ছিল। সেখানে আধুনিক রেল জংশন আমাদের স্বপ্নকেও হার মানিয়েছে।

এদিকে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় আগামী বছর যোগ হবে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় পালকটি। এই রেল যোগাযোগ চালু হলে স্বল্প সময়ে বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। প্রকল্পটি শেষ হলে শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয় ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। ঢাকা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। যাত্রী পরিষেবার পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরে আমদানি ও রপ্তানি সক্ষমতা বাড়বে ৩ গুনেরও বেশি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দেশের সবচেয়ে বড় সবজি উৎপাদনকারী যশোরের কৃষি এবং কৃষকদের। ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাত।

জানা গেছে বেনাপোল সীমান্ত পথে ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা বছরে প্রায় ১৮ লাখ। ঢাকা-বেনাপোল রেলপথ চালু হলে সাতক্ষীরা ও খুলনার মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের চাকাও খুলে যাবে। বাড়বে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি। ফেডারেশন অব কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এই সেতু হয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হলে শুধু দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল নয় গোটা দেশের মানুষের জন্য মহা আশীর্বাদ বয়ে আনবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button