

আশাশুনি প্রতিনিধিঃ
আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বাঁকড়া গ্ৰামের মৃত মোকছেদ সরদারের ছেলে জলিল সরদার ২০০৫ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত গিয়ে সেখান থেকে গুম হওয়ার দীর্ঘ ১৮ বছর পর সামান্য বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রতিবেশী মৃত শিবপদ বাছাড়ের ছেলে বনমালী বাছাড় কর্তৃক জলিল সরদারের ছেলে মোস্তফা সরদারকে তার পিতাকে যে ভাবে গুম করা হয়েছিলো একই ভাবে তাকেও গুম করা হবে এমন হুমকির প্রেক্ষিতে নীরুপায় হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মোস্তফা সরদার।
মোস্তফা সরদার প্রতিবেদককে বলেন, ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ তার পিতা জলিল সরদার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত যান। ভারতে যাওয়ার অনুঃ ১০/১৫ দিন পরে আমার পিতা আমাকে ফোনে জানান, “আমাকে মেরে ফেলার জন্য কিছু লোক ২/৩ দিন থেকে আমার পিছে পিছে ঘুরছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম বনমালী এবং তার লোকজন আমাকে জানে মারার জন্য তাদেরকে ভাড়া করেছে”। এই ছিলো আমার পিতার সাথে আমাদের শেষ যোগাযোগ।
এরপর আমরা ভারত গিয়ে অনেক খুজাখুজির পরও তার আর কোন সন্ধান পায়নি। সে সময়ে দেশে ফিরে থানায় মামলা বা জিডি করার অনেক চেষ্টা করেও আমরা মামলা বা জিডি কোনটাই করতে পারিনি। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বাওচাষ গ্ৰামে গ্ৰাম ডাক্তার কোহিনুরের চেম্বারে বনমালী বাছাড়ের সাথে গ্ৰাম ডাক্তার কোহিনুরের কোন একটা বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালে বহু মানুষের সম্মুখে বনমালী কোহিনুরকে বলে জলিলকে যেভাবে গুম করেছি তোর অবস্থাও কিন্তু ঐরকম করে দেব। এঘটনার পরে মোস্তফা তার পিতা গুম হওয়ার ব্যাপারে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন যার নং ১০১০ তাং ২২/০৩/২০১১ খ্রীঃ।
সর্বশেষ সম্প্রতি ১৭ এপ্রিল-২০২৩ সন্ধ্যা অনুঃ ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে কোনার বাঁকড়াস্থ মোস্তফার ঘরে দিন মজুর সুবোল এর সাথে ধান কাটা সংক্রান্ত বিষয় দিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সুবোল এর পক্ষ নিয়ে বনমালী মোস্তফার সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে বনমালী বলে “মোস্তফা তুই বেশি বাড়াস না, তোর অবস্থাও কিন্তু তোর বাপের মত করবো”। জন সম্মুখে বনমালীর মুখে বারংবার বাপকে (জলিল) গুম করেছি কথাটা শুনে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি আমি। সর্বশেষ ঘটনার বিবরন দিয়ে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে যার নং ৭৪২ তাং ১৯/০৪/২০২৩ খ্রীঃ। মোস্তফা আরও বলেন, গত ১৭ এপ্রিল ঘটনার পরের দিন বাঁকড়া গ্ৰামের মৃত লক্ষীকান্ত দাসের ছেলে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক রনজিৎ দাসকে ফোন দিয়ে বাওচাষ গ্ৰামের জালাল উদ্দিন সরদারের ছেলে বনমালীর সহযোগি একাধিক নাশকতা মামলার আসামি মিজান সরদার বলে “তোর মটর সাইকেলে মোস্তফাকে কখনও তুলবি না। ওকে যেখানে পাবো মেরে হাড় গুড়ো করে দেব। আর ওকে তোর মটর সাইকেলে পেলে তোর মটর সাইকেল সহ ভেঙে গুঁড়ো করে দেব”।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল এত বছর পরে তাদের বিচার যখন হয়েছে। আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচার একদিন হবেই এবং সন্তান হিসেবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো আমি। তার পিতা গুমের সাথে বনমালী এবং তার লোকজন জড়িত, কেন এমনটি সন্দেহ হচ্ছে তার ? এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা বলেন, তার পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় বনমালীর সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। তার পিতা জীবনের নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার পেতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন তার প্রমান তাদের কাছে গচ্ছিত আছে। এর পাশাপাশি পিতার সাথে সর্বশেষ কথার সূত্র ধরে এবং বারংবার তার পিতার মতো অন্যদের এমনকি তাকেও গুম করার হুমকিই আমাদেরকে তাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করছে।
সর্বশেষ তিনি বলেন, তদন্ত করলে তার পিতার গুমের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা সম্ভব হবে।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বনমালী বাছাড়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ও ধরনের কথা বলেনি। ওর পিতা পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। ভারত সরকারের কাছে বিচার না চেয়ে আমার পিছনে কেন লাগছে সে ? কথোপোকথনের একপর্যায়ে আমি মামলার কাজে কোর্টে আসছি আপনার সাথে পরে কথা হবে বলে ফোনটা কেটে দেয়।
সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক পিতার গুমের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করার পাশাপাশি বিচারের আওতায় আনার আকুতি জানিয়েছেন ছেলে মোস্তফা।