আন্তর্জাতিক

ইমরান খানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাসভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনও সময় গ্রেফতার হতে পারেন তিনি। দ্য ডনের খবরে বলা হয়, পাকিস্তান তেহরিক-ই ইসলাম (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান লাহোরে তার জামান পার্কের বাসভবন থেকে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। এর আগে সেখানে উপস্থিত হয় ইসলামাবাদ এবং পাঞ্জাব পুলিশ।

বিবিএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৭০ বছর বয়সী সাবেক তারকা ক্রিকেটার ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ ওঠে, এ সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় দখলে থাকা উপহার কেনাবেচা করেছেন ইমরান। বলা হচ্ছে, লেনদেন করা এসব উপহারের মূল্য ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের বেশি।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ অক্টোবর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরান খানকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করে। তার বিরুদ্ধে হয় ফৌজদারি মামলা।

এক টুইট বার্তায় ইসলামাবাদ পুলিশ জানায়, লাহোর পুলিশের সহযোগিতায় ইমরানকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, পিটিআই প্রধান গ্রেপ্তার এড়াচ্ছেন। কারণ পুলিশ সুপার ইমরানের বাড়িতে গেলে তাকে সেখানে পাননি।

এদিকে ইমরানের বাড়ির সামনে নেতা-কর্মীরাও অবস্থান নিয়েছেন। যদিও পাকিস্তানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছে আদালত, সরকার নয়।

ক্ষমতা ছাড়ার চার মাসের মাথায় জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ তোশাখানা মামলার আলোকে ইমরান খানের অযোগ্যতা চেয়ে চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচন কমিশনে রেফারেন্স পাঠান। এতে দাবি করা হয়, ইমরান খান তোশাখানা থেকে নেয়া উপহারের বিবরণ এবং এই উপহার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের তথ্য প্রকাশ করেননি।

৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জবাব দেন ইমরান খান। তিনি স্বীকার করেন, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অন্তত চারটি উপহার তিনি বিক্রি করেছিলেন। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ২ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার রুপিতে যে উপহারগুলো সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো ৫ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে তিনি বিক্রি করেছেন। এসব উপহারের একটিতে আছে হীরাখচিত হাতঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিঙ্ক, একটি দামি কলম এবং একটি আংটি। বাকি তিনটি উপহারের মধ্যে আছে চারটি রোলেক্স ঘড়ি।

২০১৮ সালের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত ইমরান খান ৩১টি উপহার পেয়েছিলেন, যেগুলোর মধ্যে নিয়ম মেনে চারটির দাম পরিশোধ করেছিলেন তিনি। নিয়মটি হলো- উপহারের দাম ৩০ হাজার রুপির কম হলে, সেগুলোর জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।

২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ইমরান ৯টি উপহার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে তিনটির জন্য ১০ লাখ ৭১ হাজার রুপি দিয়েছেন।

ইমরান দাবি করেন, এসব উপহার তিনি কয়েকজনকে দিয়ে দিয়েছেন; যাদের নাম প্রকাশ করেননি পিটিআই প্রধান। এসব উপহারের মধ্যে স্বর্ণ ও হীরা দিয়ে তৈরি লকেট, এক জোড়া কানের দুল (সোনা এবং হীরা) এবং হীরার একটি আংটি। এই গহনা কেনার জন্য তিনি ৫ লাখ ৪৪ হাজার রুপি জমা করেছিলেন।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ইমরান ১২টি উপহার পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটির জন্য তিনি ১ কোটি ২৯ লাখ রুপি দিয়েছেন। ২০২১ সালের জুলাই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি উপহার পান; এর মধ্যে দুটির জন্য ৩১ লাখ রুপি দেন তিনি।

ইমরান আরও জানান, তার মেয়াদে বিভিন্ন কর্মকর্তারা ৩২৯টি উপহার পেয়েছেন; যার মধ্যে ফুলদানি, আর্ট পিস, লকেট এবং ডেকোরেটিভ আইটেমসহ ৫৮টি উপহার তাকে এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উপহার দেয়া হয়েছিল। এসব উপহারের মধ্যে কেবল ১৪টি আইটেম ছিল ৩০ হাজার রুপির বেশি মূল্যের, নিয়মিত পদ্ধতি অনুসারণ করে এগুলো মূল্য তিনি পরিশোধ করেছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button