

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দিন থেকে গত চারদিনে শার্শা, ঝিকরগাছা ও যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ নারী সহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার আগেই সড়কেই ঝরে গেল তাজা প্রাণগুলি।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি! কিন্তু সে আনন্দ ও খুশি বিষাদে ভরে উঠেছে নিহতদের পরিবারের মাঝে। কিছুতেই থামছে না সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ।
বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত গতির যানবাহনের চাপায় পড়ে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার ঈদের দিন থেকে গত চার দিনেই মুহূর্তের মধ্যে ঝরে গেল তাজা ছয়টি প্রাণ। যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
ঈদের দিন সকালে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় ঝিকরগাছায় মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মোবারকপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আকিমুল ইসলাম ওরফে মাসুম বিল্লাহ (৫৫) নিহত হয়েছে।
এদিকে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছার বেনীয়ালী নামক স্থানে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন ইমরান হোসেন (১৬) নামের এক যুবক। সে ফতেপুর গ্রামের ইসরাফিল হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের বেনেয়ালী বেলতলা গির্জার পাশে মহাসড়কে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইমরান রাস্তার ছিটকে পড়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।
অন্যদিকে যশোরের বাঘারপাড়ায় ঈদের নামাজ শেষে ঘুরতে বেরিয়ে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় আল-আমিন (১৮) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। শবিবার (২২ এপ্রিল) ঈদের দিন দুপুরে উপজেলার ছাতিয়ানতলা নামক স্থানে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আল-আমিন একই উপজেলার দোহাকুলা বীরডাঙ্গাপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ফরিদুল কবিরের ছেলে। তিনি বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পাশ করেন।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে স্ত্রী ঐশি এবং পাঁচ বছর বয়সী ভাই তানজিমকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে শহরে ঘুরতে বের হয়েছিল ইসমাইল হোসেন ওরফে হ্যাপি। তবে ঈদের ঘোরাঘুরি হয়নি তাদের।
শনিবার (২২ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে যশোর শহরতলীর বকচর র্যাব অফিসের সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্ত্রী ঐশী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে স্বামী ইসমাইল হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ইসমাইলের ভাই তানজিম আশঙ্কামুক্ত। ইসমাইল হোসেন শহরের বকচর কবরস্থানপাড়ার বাসিন্দা।
যশোরের শার্শায় মোটরসাইকেল সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ইকবাল হোসেন (৪২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহতের বড় ভাই মনিরুজ্জামান(৪৫)।
নিহত ইকবাল হোসেন শার্শার ডিহি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গোকর্ণ গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। ঈদের পরেরদিন রবিবার সকাল ৯ টার সময় উপজেলার গোড়পাড়া বিশ্বাস বাড়ী শাহজান বিশ্বাসের বাড়ির সামনে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
হাসপাতাল ও নিতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে নীজ বাড়িতে বেড়াতে আসেন ইকবাল। ছুটি সীমিত হওয়ায় নীজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বড় ভাইয়ের সাথে মোটরসাইকেল যোগে কাউন্টারে যাচ্ছিলেন।
প্রতিমধ্যে গোড়পাড়া বিশ্বাস বাড়ীর সামনে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী সিএনজির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে দুই ভাই গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবালকে মৃত ঘোষণা করেন।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক লক্ষিনদর বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত দুইজনকে নিয়ে আসার সময় প্রতিমধ্যে ইকবাল হোসেন নামে এক জনের মৃত্যু হয়। মনিরুজ্জামান নামে অপর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
একই দিন সন্ধ্যায় শার্শার শ্যামলাগাছী নামক স্থানে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী এ্যাডভোকেট মাহবুবুর হাসান (৫০) নামে একজন নিহত হয়েছে। নিহত মাহবুবুর হোসেন শার্শার দক্ষিণ বুরুজ বাগান গ্রামের হিমে মোড়লের ছেলে।
হাসপাতাল ও নিতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় প্রয়োজনীয় কাজে শার্শার শ্যামলাগাছী জান এ্যাডভোকেট মাহবুবুর হাসান। এসময় তিনি হাইওয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতীর একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মাহবুবুর হোসেন ঢাকা জজ কোর্টে এ্যাডভোকেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ঈদের চতুর্থ দিন সকাল ৯ টার সময় যশোর সদরের খড়কি এলাকায় মোটরসাইকেলে ও মাইক্রো বাস এর সাথে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহির মৃত্যু হয়। সে যশোর সরকারি কলেজ এর ছাত্র ছিলেন। বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় এ দূর্ঘটনা ঘটে। তবে প্রাথমিক ভাবে তার নাম পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সড়ক পরিবহন আইনের কার্যকারিতা অতীব জরুরি। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। আইনের পূর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমেই সমস্যার সঠিক সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন সচেতন মহল।
নাভারণ হাইওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়কে মৃত্যু কমাতে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপ থাকলেও কিছু অসচেতন মানুষ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলাচল ও যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। নিজে সচেতন না হলে সড়কে দূর্ঘটনা কমানো দূরুহ ব্যাপার হয়ে পড়বে।