অর্থনীতি

কালনা তথা ৬ লেন‘মধুমতি সেতুর দ্বার খুলছে আগামী ১০ অক্টোবর

স্টফ রিপোর্টারঃ অবশেষে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা তথা ‘মধুমতি সেত’ুর দ্বার খুলছে আগামী ১০ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে মধুমতি সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে নড়াইলের কালনাঘাট এবং পূর্বপ্রান্তে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে।

নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

এরপর ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’ নামকরণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়েছে।

এদিকে, সেতু নির্মাণের শেষ পর্যায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে বলেন, কালনা সেতুর নামকরণ হবে ‘মধুমতি সেতু’। যদিও দেশের স্মরণীয়-বরণীয়দের নামে সেতুটির নামকরণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

অনেকের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারবর্গের নামে কালনা সেতু নামকরণ হতে পারে। অনেক আবার ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ’, ‘বীরমুক্তিযোদ্ধা লেফট্যানেন্ট এম এম মতিউর রহমান’, ‘চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান’, ‘চারণকবি বিজয় সরকার’, ‘জারিস¤্রাট মোসলেম উদ্দিন’, ‘উপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত’, ‘ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা’সহ স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের নামে নামকরণের কথা জানিয়েছেন।

কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরণের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’র সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে। এই অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষে সড়কের দুই পাশে গাছকাটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখনো ছয় ফুট সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়নি। মধুমতি সেতু চালু হলে এ সড়কে যানবাহনের চাপ সামাল দেয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন চালক ও যাত্রীসাধারণ।

এদিকে, মধুমতি সেতু উদ্বোধনের খবরে আনন্দিত নড়াইল, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পেশার মানুষ ছাড়াও যানবাহন চালকেরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button