চট্টগ্রাম

গোসাইরহাটে জলাবদ্ধ জমিতে কোটি টাকার ফসল; কৃষকের মুখে হাসি

জলাবদ্ধ জমিতে কোটি টাকার ফসল; কৃষকের মুখে হাসি

নয়ন দাস শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডে বসকাটি, চরমাইজারি ও কুলচরিপাতার চরের কৃষকদের মুখে এখন প্রশান্তির হাসি। তাদের জলাবদ্ধ জমিতে এখন কয়েক কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হয়েছে। ঘটনার শুরু গত বছরের নভেম্বর মাসে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবেনা’ বাস্তবায়নে জেলা উপজেলায় মতবিনিময় সভা শুরু করেছেন শরীয়তপুরের জেলাপ্রশাসক মোঃ পারভেজ হাসান।

গোসাইরহাট উপজেলায় আয়োজিত সভায় কুচাইপট্টি ইউনিয়নের কিছু কৃষক স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন স্বপনকে নিয়ে তাদের এলাকার জলাবদ্ধতা দূরকরণে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাৎক্ষণিক জেলাপ্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করে। জেলা প্রশাসকের পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পরিষদ থেকে প্রকল্প দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে জলাবদ্ধ স্থানগুলোতে খাল কেটে ১০-১২ ইঞ্চি পিভিসি পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন।

একসময় যে জমি বছরের ৮ মাস পানির নিচে থাকতো এখন সেখানে রবি শস্যের বাম্পার ফলন হয়। নভেম্বরে পানি নিষ্কাশনের পর সেখানে এখন সয়াবিন চাষ হয়েছে ২২০ একর জমিতে, মরিচ হয়েছে ১০০ একরে, মেস্তা পাট হয়েছে ১৮০ একর জমিতে। প্রায় ৬০০ একর জমি এখন চাষের আওতায় এসেছে। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে সয়াবিন হয়েছে প্রায় ৯৬ মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা, মরিচ হয়েছে ৩২০ মেট্রিকটন যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকা, পাটের ফলনও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি।

স্থানীয় কৃষক নাসির উদ্দীন বলেন, প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে এই জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার জন্য কোন ফসল ঘরে আনা যেতো না। এখন আমাদের ঘরে আর আর্থিক সংকট থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রী ও ডিসি সাহেবকে ধন্যবাদ।

কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন স্বপন বলেন, ইউএনও মহোদয়ের সহযোগিতায় আমরা সবাই মিলে কাজটা করেছি। কৃষকের উপকার হয়েছে খুব আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, আগের জলাবদ্ধ জমিতে এখন তিন ধরনের ফসল হচ্ছে। এটা আমাদের কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি করবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাফী বিন কবির বলেন, জেলাপ্রশাসক স্যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে চেয়েছেন। আমরা তাকে শুধুমাত্র সহযোগিতা করেছি।

জেলাপ্রশাসক মোঃ পারভেজ হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে আমরা বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছি। তাই শরীয়তপুর জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় অনাবাদি জমিকে আমরা চাষের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের সফলতার হার সন্তোষজনক। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
কুচাইপট্টি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের কৃষকদের ৩০-৪০ বছরের জলাবদ্ধতা সমাধান হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। একই সাথে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এর পাশাপাশি রপ্তানি যোগ্য পণ্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button