চট্টগ্রাম

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ বিকল্প পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালাতে চায় স্কোয়াব ও টুয়াক

বিশেষ প্রতিবেদক :
নাফ নদের নাব্যতার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন রুটে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনস ভ্রমণ করাতে চায় সী-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)। তারা মনে করেন, বিকল্প পথ হিসেবে টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন সৈকতে অস্থায়ী জেটি করে পল্টুন নির্মাণ করে সেন্টমার্টিন রুটে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি তোলা হয়েছে।

স্কোয়াব ও টুয়াক এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তারা জানান, প্রয়োজনে নিজেদের খরচে অস্থায়ী জেটি ও পল্টুন স্থাপন করবে। এটা করা গেলে অল্পখরচে ও অল্প সময়ে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন পৌঁছানো সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সী-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সী-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফাইল আহমদ।

লিখিত বক্তব্যে হোসাইন আহমদ বাহাদুর বলেন, অনেক বছর ধরে নাব্যতা সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা জাহাজ পরিচালনা করে এসেছি। তাছাড়া নাফ নদীর কয়েকটি অংশে ডুবোচর জেগেছে কয়েক বছর ধরে। মাঝে মধ্যে ওই সব ডুবোচরে পর্যটকবাহী জাহাজ আটকা পরার খবর অতীতে আপনারা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছেন। সম্ভবত এই কারণে সরকার চাইছে আপাতত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে এবার জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকুক। প্রয়োজনে পর্যটক পারাপারে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচল করা হবে এবং তা হচ্ছেও আমরা জাহাজ মালিক ও ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। তাই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছি।

তার দাবি, পর্যটকদের চাপ এবং পর্যটন শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেখে আমাদের বিকল্প উপায় খুঁজতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজারে প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পর্যটকদের চাহিদা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। তাছাড়াও কয়েকশ মানুষের বিনিয়োগে টেকনাফ, উখিয়া ও সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠেছে উন্নতমানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও অসংখ্য রেস্তোঁরা। তাতে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

তাদের মতে, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ১০টি জাহাজ চলাচল করে আসছে। কিন্তু গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্তে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক।

সংবাদ সম্মেলনের তথ্য মতে, প্রতিবছর অন্তত ৩ লাখ পযর্টক টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান। সেন্টমার্টিনে ১০ হাজার মানুষ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে নাফ নদীর পশ্চিম পাশে টেকনাফ উপকূল এবং পূর্বদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমানা দেখা যায়। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের পিছু নেয় শত শত গাঙচিল। গাঙচিলের সঙ্গনিয়ে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে আসা যাওয়ার এই বিরল অভিজ্ঞতা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ।
আয়োজকদের মতে, চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ পরিচালনা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া জ¦ালানী খরচও অত্যাধিক। কিন্তু পর্যটকরা চান অল্প খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। এই কারণেই স্কোয়াব ও টুয়াক বিকল্প উপায়ে জাহাজ চলাচলের এই উদ্যোগ নিতে চায়।

সংবাদ সম্মেলনে সী-ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফাইল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমদ বাহাদুর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল আনু ও সাধারণ সম্পাদক মুনিবুর রহমান টিটু, সহ-সভাপতি ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক নুরুল আলম রনি, পার্বত্য বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তোহা, যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন বিশ^াস (তুষার), সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম এ কাজল, আকতার নূর প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে আশা করা হয়, পর্যটন শিল্প ও পর্যটকদের কথা বিবেচনা সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন বিকল্প পথে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সুযোগ করে দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button