

জেমস আব্দুর রহিম রানা:
আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে বর্ষার সবুজ গাঢ় শ্যামল সৌন্দর্যে প্রকৃতি নতুন করে জেগে ওঠে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নাগরিক জীবনে বর্ষার এ রূপ উপভোগের অবসর মানুষের এখন আর নেই।
ছাদের কার্নিশে জমে থাকা টলটলে পানি বা ফেলে রাখা গাড়ির টায়ারে জমা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পেড়ে বাচ্চা তুলে। তারপর বিস্তার লাভ করে এডিস মশার বংশধর। ভরা বর্ষায় প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে, জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা-পুরো শরীর ব্যথা, সঙ্গে খুসখুসে কাশি, শরীরের দুর্বলতা, খাবার দেখলে বমি বমিভাব হওয়া এবং মাথাব্যথাকে বলা হয় ভাইরাস ফিভার। এই প্রচণ্ড গরমে আর মাঝে মধ্যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতে গরম আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এই ভেজা প্রকট গরমে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও জ্বর হচ্ছে ঘরে ঘরে। কোনো কোনো পরিবারের সবাই এ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ জ্বর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত হতে পারে। তবে এবার ভাইরাসজনিত প্রকোপেই বেশি।
ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং ভ্যাপসা গরম ও নানা কারণে ঠান্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হচ্ছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে। যাকে মৌসুমি রোগ বলা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি হলে ঘরে বসে না থেকে অবশ্যই করোনা ও ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে এবং টেস্ট করালেই বোঝা যাবে, রোগ ধরা পড়বে। এ জন্য অবশ্যই হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো অবস্থায় পেইন কিলার কিংবা ফার্মেসির ওষুধ খাওয়া যাবে না। এমন কিছু ওষুধ আছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেলে তাতে রোগীর অবস্থা জটিল হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশেই এখন মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুসহ ভাইরাস জ্বরের আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিশুদের পাশাপাশি নারী-পুরুষ ডেঙ্গু জ্বর, ডায়রিয়া, ঠান্ডা, হাঁচি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যখন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও দীর্ঘ হচ্ছে। এর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ তো আছেই।
এদিকে মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়েছে নানা সিন্ডিকেট। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য দেওয়া হচ্ছে ডিএনএস স্যালাইন। সেই স্যালাইনের সংকট দেখিয়ে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ডিএনএস স্যালাইন। শুধু তাই নয়, জ্বরের পথ্য হিসেবে জনপ্রিয় ডাব রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কেউ যেন অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে না পারে, সে সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা আশা করি, মানুষের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে কোনো অবৈধ চক্র যেন অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে না পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে নজর দেবে।