দর্শক শূন্য স্টেডিয়াম! কী হলো চট্টগ্রামের দর্শকদের?
সাগরিকায় ক্রিকেট মানেই যেন উন্মাদনা। কিন্তু সেইসব এখন অতীত। চট্টগ্রামের দর্শকরা যেন ক্রিকেটকে বয়কট করেছেন! সর্বশেষ বিপিএলেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য। বিপিএলে সিলেট ও ঢাকায় দর্শকদের উন্মাদনা থাকলেও চট্টগ্রামে ছিল ফাঁকা গ্যালারি। সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানেডেতে আশা করা হচ্ছিল গ্যালারি ভরা থাকবে। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে এসেই গ্যালারিতে দর্শক নেই।


বিবিএস স্পোর্টস ডেস্ক: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়ায় দুপুর ১২টায়। তার ঘণ্টাখানেক আগেই স্টেডিয়ামে প্রবেশের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দর্শকদের আগমন ছিল ধীর গতিতে। খেলা শুরু হওয়ার পর হাতে গোনা দর্শকের উপস্থিতি ছিল গ্যালারিতে। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, তবুও দর্শকদের কোনো আগ্রহ নেই। অথচ একটা সময় দর্শকরাই ছিল চট্টগ্রামের গর্ব। অন্য কোনো ভেন্যুতে দর্শক না হলেও সাগরিকায় একটি টিকিটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হতো ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু গত কিছুদিন ধরেই সেখানে ভাটা পড়েছে। বিপিএলে স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ম্যাচেও দর্শক টানতে পারেনি। এবার আন্তর্জাতিক ম্যাচেও একই ঘটনা।
চট্টগ্রাম বলেই দর্শক খরা নিয়ে এতো আলোচনা। তবে কি আর কোন কারণে দর্শকরা ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? বিপিএলে দর্শক না হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল চট্টগ্রামের দলটির পারফরম্যান্স। দল হিসেবে চট্টগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারা। আর বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের ম্যাচের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলেছে। ঢাকায় দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খোঁয়ানোয় বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি গুরুত্বহীন। এমন ম্যাচে দেখতে তাই আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেনি চট্টগ্রামের দর্শকরা।
পুরো গ্যালারিতে বিচ্ছিন্নভাবে শ’পাঁচেক দর্শক শেষ পর্যন্ত মাঠে বসে খেলা দেখেছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে সংখ্যা ছিল আরও কম। বিকেল গড়াতে কিছু দর্শক মাঠে ঢুকেছে। লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাভার করেছেন বিশেষ প্রতিবেদক মাসুদ পারভেজ। চট্টগ্রামের মাটিতে এতো কম দর্শক দেখে বিস্মিত নন তিনি, ‘এটাতো স্বাভাবিকভাবে হওয়ার কথা। একেতো কর্মদিবস, তার মধ্যে দলের পারফরম্যান্স তলানিতে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে কোন মানসিকতা নিয়ে খেলা দেখবেন দর্শকরা? মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণ হয়ে যাওয়াতেই এখানকার দর্শকরা আগ্রহ পাননি।’
বাংলাদেশ দল এর আগেও খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। তবুও অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে দর্শকরা মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো সাকিব-তামিমদের। অবশ্য মাঠে উপস্থিত দর্শকরাও এমন খালি গ্যালারি এর আগে দেখেননি। পূর্ব গ্যালারিতে জিসান নামের এক দর্শক খেলা দেখছিলেন। তিনি অবশ্য এমন ফাঁকা গ্যালারি উপভোগই করলেন, ‘এতো কম দর্শক আমি কখনোই দেখিনি। বাংলাদেশের খেলা চট্টগ্রামে এলেই আমি দেখি। কিন্তু এতো কম কখনো ছিলো না। তবে আমার ভালোই লাগছে।’
জিসান উপভোগ করলেও ৫ বন্ধু মিলে খেলা দেখতে আসা একটা গ্রুপের কাছে এমন খাঁ খাঁ গ্যালারি ভালো লাগেনি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীদের একজন বলেছেন, ‘দেখুন দর্শকরাই হচ্ছে খেলার মাঠের প্রাণ। চট্টগ্রামে খেলা হলেই গ্যালারিতে উৎসব হয়। আজ পুরো গ্যালারিই ফাঁকা। এভাবে খেলা দেখে আনন্দ নেই। বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ভালো না বলেই দর্শকরা আগ্রহ হারিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আবারও জেগে উঠবে চট্টগ্রামের গ্যালারি।’
এদিকে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইংলিশ সমর্থকের উপস্থিতি ছিল। তারা বিভিন্ন গ্যালারিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছিলেন। পশ্চিম প্রান্তের গ্যালারিতে আয়েশি ভঙ্গিতে খেলা দেখছিলেন মার্ক নামের দুই ক্রিকেটপ্রেমী। জায়ান্ট স্ক্রিনের পেছনে বসা এই দুই ইংলিশ সমর্থক অদ্ভুত এক পতাকা টাঙিয়েছেন। ‘পম্পি’ ও ‘গালস’ নামের পতাকা দেখতে বেশ অদ্ভুত, অনেকটা পুরুষদের অন্তর্বাসের মতো।