রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ২০ জন

ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। তারা সভা, সমাবেশ, উঠোন বৈঠক, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং তাদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের হ্যান্ডবিল ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ও ভোটারদের বিভিন্ন আশ্বাস প্রদান করছেন। প্রার্থীরা বিভিন্ন ইউনিয়নসহ হাটবাজার, চায়ের দোকানে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, বিভিন্ন গাছ বা সুবিধাজনক স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার টাঙিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। অসুস্থ নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করছেন।

জানা গেছে, যশোরের ঝিকরগাছা-চৌগাছা এই দুই উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন যশোর-২। এই আসনে ভোটার মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৮ জন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং- গ্রুপিং করছেন। এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য (আ.লীগ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দীন, সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের জামাতা ডা: তৌহিদুজ্জামান তুহিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলী রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট এ বি এম আহসানুল হক আহসান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশীষ ইসলাম দেবু, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস।

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেরা নাজমুল মুন্নি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মো. ইসাহক, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহী টিপু, ঝিকরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আরশাদুল আলম, জাতীয় পার্টির নেতা অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া আরো ২/৪টি নাম কম বেশি প্রচারিত হচ্ছে।

বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) ডা. নাসিরউদ্দীন বলেন, গত ৪ বছর ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে চৌগাছা-ঝিকরগাছার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, আমি গত নির্বাচনে জয়লাভ করার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও তার সার্বিক সহযোগিতায় ২৩০ কি. মি. পাকা রাস্তা, ৩৭ টি স্কুল-কলেজ ভবন, ১০ টি মাদ্রাসা এবং ৫৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ২২৪ টি সরকারি ঘর ও ৮৪৭ টি পরিবারকে জমিসহ ঘরনির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতাল করা হয়েছে এবং আগামীতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে ঝিকরগাছা হাসপাতালকেও ১০০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে চৌগাছা-ঝিকরগাছা এই দুই উপজেলায় সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি, সে কারণে মানুষ শান্তিতে ব্যবসাবাণিজ্য ও রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে। এখানে খুন কমেছে ব্যাপক হারে।
সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শহীদ মশিয়ূর রহমানের হাত ধরে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি।

আগে দুইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি, সে কারণে আমি পুনরায় নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করছি। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমি এমপি থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, দুই উপজেলায় দুটি সরকারি কলেজ, দুটি হাইস্কুল সরকারি, শতভাগ বিদ্যুৎ, সিংহভাগ গ্রামীণ সড়ক পাকা, দুই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মডেল মসজিদ, মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প আমার সময় অনুমোদন করেছিলাম। সে কাজ এখনো চলমান। গত সাড়ে চার বছর বিরামহীন গণসংযোগ, নবীন-প্রবীণদের মতামত নির্বিশেষে, ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছি। সেই বিবেচনায় আগামীতে নৌকা প্রতীকের আশা করছি। আমি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জয়লাভ করব।
গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস বলেন, আমি মাটি ও মানুষের রাজনীতি করি, দেশ ও জাতির কল্যাণে রাজনীতি করি, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে তার সঙ্গে আছি। ঝিকরগাছা-চৌগাছা এই দুটি উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ করে মানুষের মন জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছি।

তাছাড়া আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত, যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক প্রদান করেন তাহলে দুই উপজেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেরা নাজমুল মুন্নি বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না, আমরা রাজপথে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেই তবে ঘরে ফিরব। ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মর্তুজা এলাহী টিপু বলেন, এই অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হবে নৌকার মাঝি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button