খুলনা

নদী শাসন ব্যবস্থা না থাকায় হুমকির মুখে কাঙ্খিত ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাধ!

আজ ভয়াল সিডরের ১৬ বছর

ফরিদুল ইসলাম, শরণখোলা বাগেরহাট: প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর শণখোলাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল ‘মোরা ত্রাণ চাইনা বেড়িবাধ চাই’। কিন্তু বেড়িবাধ নির্মাণ করা হলেও নদী শাসন ব্যবস্থা না করায় সে বাঁধ এখন হুমকির মুখে। তাই এলাকাবাসির ধারণা যে কোনো মুহুর্তে এই কাঙ্খিত বেড়িবাধ নদীগর্ভে বিলিন হতে পারে।

ইতোমধ্যে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ণের মরণপূরী খ্যাত গাবতলার আশার আলো মসজিদ সংলগ্ন এলাকার মূল বেড়িবাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তাই ছিড়রের ১৬ বছর পরেও মানুষের মনে বেড়িবাধ স্বপ্নের মতো রয়ে গেছে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের ভয়াল গ্রাসে ২০/২১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডে ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ৯০শতাংশ ভেঙ্গে যায় এবং সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি সহ কয়েক হাজার হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিহত হয়। মানুষের মধ্যে দেখা দেয়ে চরম দূর্ভোগ।
এর পর বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ণ সংস্থা এবং সরকার এই দূর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু তাদের ত্রাণের প্রয়োজন থাকলেও এলাকাবাসীর সবচেয়ে বড় দাবি ছিল টেকশই বেড়িবাধ। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মানের অর্থ বরাদ্ধ দেয় বিশ্বব্যাংক। চায়না কোম্পানির সহযোগীতায় উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) আওতায় বেড়িবাধ নির্মাণের কাজ শুরু করে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৬ বছর সময় পার করে। কিন্তু একটি সূত্রে জানা গেছে এখন পর্যন্ত প্রকল্প কর্মকর্তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের কাছে বেড়িবাধটি হস্তান্তর করতে পারেনি। তবে শিগ্রই সিইআইপি কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের কাছে হস্তান্তর করতে পারে বলে জানা গেছে।

সিড়র দূর্গত সাউথখালীএলাকার বাসিন্দা আঃ খালেক হাওলাদার, মোশারেফ হাওলাদার, বাদল খান ও ইউপি সদস্য জাকির হ্ওালাদার অভিযোগ করে বলেন, নদী শাসনের ব্যবস্থা না রেখেই এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া এই বেড়িবাধে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করায় বেড়িবাধ টেকশই হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলার আশার আলো মসজিদ সংলগ্ন এলাকার ৪০০ মিটার মূল বেড়িবাঁধের সিসি বøকে ধস নামা সহ প্রায় ১ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া বগি ও উত্তর সাউথখালী এলাকার বিভিন্ন যায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায় মূল বেড়িবাধ হুমকির মধ্যে পড়েছে।

উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, টেকসই বেড়িবাধ নির্মানের নামে সেই সময় নয়-ছয় হয়েছে। মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা ও নদী শাসন ব্যবস্থা না রাখায় আজ এ কাঙ্খিত বেড়িবাধটি হুমকির মুখে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বেড়িবাধ নির্মানকালিন সময় নদী শাসন ব্যবস্থা না করায় বেড়িবাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং চলছে কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়। এ ব্যাপারে নদী শসন ব্যবস্থার প্রযোজনীয় অর্থ চেয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। তবে প্রকল্প পাশ হতে দেরি হলে এই কাঙ্খিত বেড়িবাধটি অনিশ্চয়তার মুকে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button