চট্টগ্রাম

নাইক্ষ্যংছড়িত পানি সংকট নিরসনে ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ চলমান

পানি সংকট নিরসনে ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ চলমান

মোহাম্মদ ইউনুছ নাইক্ষ্যংছড়ি(বান্দরবান)প্রতিনিধিঃ
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে দীর্ঘ দিনের খাবার পানির তীব্র সংকট নিরসনে প্রায় দশ কোটি টাকার কাজ চলমান। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র পানি ও জলের সমস্যায় জর্জরিত সদর এলাকার প্রায় মানুষ।

উপজেলার বহু নলকূপ,রিং ওয়েল অচল হয়ে পড়েছে। তবে সচেতন মহলের মতে গরমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক ছোট খাল,পুকুর, লেক ও ছড়া থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। মানুষের এমন দূর্ভোগে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগ তদারকি করেও কোন কাজে আসছেনা। আবার অনকে তাদের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছে।

উপজেলার পাহাড়ি জনপদের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুমের ফাত্রাঝিরি সদর ইউনিয়নের চাকড়ালা,উপজেলা সদর, বাগান ঘোনা, সহ,সোনাইছড়ি ও দোছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির এ তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহ মোঃ আজিজ জানান, প্রচন্ড গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ চার ইউনিয়নে অন্তত দেড়,দুই শতাধিক রিংওয়াল, নলকূপ অকেজু হয়ে পড়েছে । এতে করে পাহাড়ি বাঙ্গালিদের ঘরে ঘরে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় চতুর দিকে পানির জন্য হাহাকার হয়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের আবুল কালাম, কপিল উদ্দিন সাংবাদিকের বলেন,খাবার পানির অভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য স্থানে অবস্থান করছি। আমাদের আসপাশের খাল নালা পুকুর রিং ওয়েল সব শুকিয়ে গেছে। এ সরকারের আমলে অনেক রাস্তা ঘাটসহ নানা উন্নয়ন হলেও এখানো পানির সমস্যা নিরসন হয়নি। এছাড়াও অনেকে লেক,পুকুর ও ছড়ার ময়লা যুক্ত পানি খেয়ে ডায়েরিয়া, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব এলাকার মানুষ।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন,তার ইউনিয়নে পানির সমস্যা দীর্ঘ দিনের, এ সমস্যার সমাধান ও নিরাপদ খাবার পানির সর্বরহর বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় এর মাধ্যমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় শীঘ্রই নিরসন হতে যাচ্ছে। দোছড়ি ইউনিয়নের মহিলা সদস্য জাইতুন্নাহার জানান, তাদের বাড়ির পাশে একটি রিংওয়াল ছাড়াও তার বাড়ির আশপাশের আরও কয়েকটি নলকূপ থেকে পানি কম উঠছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ দশার সৃষ্টি হয়েছে। একই ভাবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর সোনাইছড়ি, দোছড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে।

এসব গ্রামে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যনি মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে উপজাতীয় পল্লীর অর্ধশতাধিক রিংওয়েল/ টিউবওয়েল অচল হওয়ায় নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে পাহাড়ি ছড়া, ঝিরি পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এবছর শত শত কৃষকের চাষাবাদও টিক ভাবে ফসলের বাম্পার ফলন হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলহাজ্ব মোঃ শফিউল্লাহ জানান, প্রচন্ড গরমে শুষ্ক মৌসুমের তিন মাস এসব পাহাড়ি এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের বিষয়টি নিয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলার নির্বাহি প্রকৌশলিকে অবগত শুপিয়ে পানি সংকট নিরসনের জন্যে বিগত ২০২১ সালে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রানালের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশো সিং এমপি মহোদয়ের আন্তরিকতায় নাইক্ষ্যংছড়িতে পানি সংকট নিরসনের কাজ শুরু হয় বর্তমান চলমান রয়েছে।

প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালের অধীনে চলমান এ কাজ দুই দাপ শেষ হয়ে তৃতীয় দাপ চলছে। আগামী অর্থবছরে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সদর ইউপির কোথাও পানির সমস্যা হবে না। এছাড়া পার্যায ক্রমে উপজেলার সব এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের পানির চাহিদা পূরণ করার আশ্বাস প্রদান করেন। দৌছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবউল্লাহ বলেন, দোছড়ি ইউপিতে ঝিরি-ছড়ার পানির উৎস বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তীব্র তাপদাহে বন্যপ্রাণীরা পানির উৎস খোঁজে ঝিরি-ছড়ায় নেমে এসেছে। ফলে পানির শেষ উৎস গুলো এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষিত পানি পান করে এলাকার মানুষ অসুস্থ হছে। তিনি এ বিষয়ে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন বন উজাড়, পাহাড় কাটা, ঝিরিতে বাঁধ দেয়াসহ যে সকল মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সে সবের বিরূদ্ধে প্রশাসন সব সময়ই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু জনতার জাগরণ না হলে কেবল অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের পক্ষে পরিবেশ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।

নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি, গড়ে তুলি সবুজ বেষ্টনী। গাছের গোড়ায় কুড়াল মারার সময় একবারের জন্য হলেও ভাবি, নিজের পায়ে কুড়াল মারছি না তো? তাই পানির সংকট দূর করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button