চট্টগ্রামদেশজুড়ে

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আসা গবাদি পশুর উপড় প্রশাসনের নজরদারির, স্বস্তিতে খামারীরা

মোহাম্মদ ইউনুছ নাইক্ষ্যংছড়িঃ

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আনা, মিয়ানমারের গরু-মহিষের উপড় প্রশাসনের নজরদারির বাড়ায় আমদানি আপাতত বন্ধ রেখেছে পাচার কারীরা। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন দেশীয় খামারীরা দেখছেন উন্নয়নের লক্ষ মাত্রা। এদিকে গত দুই মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেদেশের সেনাবাহিনী ও স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত চলছে ঘুমধুম সীমান্তে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য বান্দরবানের জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ গরু-মহিষ চোরাকারবারিরা। সম্পপি বিজিবি, ও পুলিশের করা নজরদারীতে চোরাই পথে গরু-মহিষ প্রবেশে ব্যাপক সংকটের মুখে পড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামুর উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া,ঈদগড়ের বেশ কিছু চুরাকারবারিরা।কক্সবাজার জেলার পূর্বাঞ্চল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া,ঈদগড় ইউনিয়ন এসব এলাকার মধ্যে একমাত্র বড় গরুর হাট হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গর্জনিয়া বাজার। কিন্তু মিয়ানমারের ওই সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথ দিয়ে আসা গরু-মহিষ গর্জনিয়া বাজারে সয়লাব হয়ে কেনাকাটার ধুম পড়েছিল কিছু দিন। এতে হঠাৎ করে দেশিও গরু-মহিষের দরপতন গড়লে বেকায়দায় পড়েন দেশিও খামারিরা।
গর্জনিয়া তিতার পাড়ার খামারি আব্দুর রশিদ বলেন, চোরাই পথে আসা গরুগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম দামে পাচ্ছে ক্রেতারা। তাই আমাদের গরু বিক্রি কমে গেছে। খামারি আইয়ুব জানিয়েছেন ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে এখন বেকায়দায় আছি কারণ মিয়ানমারের গরু আসায় আমরা খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছিনা। গত হাট বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ১১ বিজিবি ও গর্জনিয়া পুলিশের তৎপরতায় মিয়ানমারের চোরাই গরু গর্জনিয়া বাজারে উঠাইতে পারেনি চোরাকারবারিরা এজন্য দেশিও খামারিদের মনে স্বস্তি আসে। এজন্য এলাকার মানুষের মাঝে প্রশংসায় ভাসছেন নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ও গর্জনিয়া পুলিশ। অপরদিক খামারিরা তাদের ও সাধুবাদ জানান।অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির বেশ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু আসছিল। এতে সরকার হারাছে কোটি টাকার রাজস্ব। জানা যায় কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ১৩ টি সিন্ডিকেট টেকনাফের করিডোর বন্ধ ও সীমান্তে সংঘাত শুরুর পর থেকে অবাধে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চোরাই গরু আনছিল। প্রতিদিন তিন’শ থেকে চার’শ চোরাই গরু বাংলাদেশে আসায় স্থানীয় খামারিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েন।
স্থানীয়দের সূত্র মতে সীমান্তে সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত দেড়মাসে নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভাল্লুক খাইয়া, চাকঢালা ও দৌছড়ির পয়েন্টের চোরাই পথ দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ শুরু হয়। প্রতিদিন অবাধে ঢুকেছে। এভাবে গত দেড় মাসে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক গরু ঢোকানো হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির খামারি আতিক উল্লাহ জানান, মিয়ানমার থেকে আনা বেশির ভাগ গরু বিভিন্ন রুগে আক্রান্ত তার প্রভাব পড়েছে আমাদের খামারে।
ফুলতলী এলাকার বাসিন্দা তাহের জানান, সন্ধ্যা নামলেই চোরাই গরু ঢোকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে এশার নামাজের পর থেকে এপারে নিয়ে আসা হয় ঝাঁকে ঝাঁকে গরু। দিনের বেলায় আগে সীমান্তের কাছে এনে জমায়েত করা হয়। সেখান থেকে এশারের নামাজের পর হইতে ভোর ৫টা পযন্ত লাগাতার ঢোকানো হয় গরু আর গরু। এক ঝাঁকে থাকে ৮ থেকে ১০টিরও বেশি।
স্থানীয়রা জানায়,সীমান্ত এলাকায় পাহারায় থাকা বিজিবির সদস্যরা কঠোর নজরদারির পরও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কূটকৌশলে চোরাই পথ দিয়ে কারবারিরা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা।
এরই মাঝে বিজিবি সদস্যরা চোরাই গরু প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাপক তৎপরতা থাকায় তাদের অভিযানে অসংখ্য মিয়ানমারের চোরাই গরু চালান আটক করতে সক্ষম হন। একই সাথে যাতে গরু ঢুকতে না পারে সে জন্য মোড়ে মোড়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। এ কারণে গর্জনিয়া বাজারের গত সাপ্তাহিক হাটে চোরাই গরু সংখ্যা খুবই কম দেখা গেছে। বিজিবির কড়াকড়ি না হলে এই দিন হাজারের বেশি চোরাই গরু উঠতো গর্জনিয়া গরুর বাজারে। সুত্রে জানান বর্তমানে কয়েক হাজার চোরাই গরু বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। বিজিবির কড়াকড়ি বাড়ায় গরুগুলো নানাভাবে লুকিয়ে রেখেছে চোরা কারবারিরা। অনেকে ঘরের কক্ষে লুকিয়ে রেখে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে রেখে এমন তথ্য ও আছে। গত কাল বৃহস্পতিবার ছিল গর্জনিয়ার বৃহত্তর গরুর বাজারে ১১ বিজিবি ও গর্জনিয়া ফাঁড়ি পুলিশের তৎপরতায় দেখা মেলেনি মিয়ানমারের গরু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১১ বিজিবির জোন কমান্ডার ও অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, সীমান্তের চোরাই পথে আনা মিয়ানমারের অসংখ্য গরু জব্দ করে কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে। গরু পারাপারের বিষয়ে বিজিবি আরো কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরও জানান,সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি অস্ত্র,ইয়াবা,সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম ও চোরাই পথে আনা মিয়ানমারের গরু-মহিষ সহ সবধরনের পণ্য আটকে আগের চেয়ে সীমান্তে বিজিবি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button