উপসম্পাদকীয়

নিষ্প্রাণ রাজধানীর বুকে সতেজ বসন্ত

সেলিম আহমেদ

হালকা রোদ আর বাতাস বইছে রাজধানীর বুকে। ধুলায় পরিপূর্ণ শহরে আমের ডালে মুকুলের দেখা মেলা ভার। পার্কের দুই একটা গাছে হয়তো ফুটেছে পলাশ কিংবা অশোক। কোকিলের কুহুতান গিলে খাচ্ছে যানবাহনের হর্ন। তবু ক্যালেন্ডারের পাতা জানাচ্ছে ঋতুচক্রে আগমন ঘটেছে বসন্তের। একই দিনে পালিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ইট-পাথর আর যানজটের শহরে কাজের ফাঁকে দিনটি উদযাপন করছেন রাজধানীবাসী। অফিস-আদালতেও ছিল বসন্তের আমেজ।

মিরপুর-২ এর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাবিহা ইসলাম। সবুজ পাড়ের কমলা শাড়ি পরে সকালে ঘর থেকে বের হয়েছেন তিনি। উদ্দেশ কর্মস্থল। বসন্তের অনুভূতি জানিয়ে সাবিহা বলেন, ‘সপ্তাহের মাঝেই পড়েছে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস। তাই অফিসেই থাকতে হচ্ছে সারাদিন। সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেই কাটবে আজকের দিন।’

Google News গুগল নিউজে বিবিএস নিউজ 24’র খবর পড়তে ফলো করুন

রাজধানীর বারিধারার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এম ফাহিম। এই তরুণের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমার বিশেষ কোনো মানুষ নেই। তবে ভালোবাসার কেউ নেই এ কথা ভুল। আজ মায়ের জন্য কোনো উপহার কিনব। বাড়িতে যখন যাব, নিয়ে যাব। এই শহরে আমার তেমন আপন কেউ না থাকলেও বাড়িতে ভালোবাসার মানুষ, মা আছেন।’

ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীতে নানা আয়োজন শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ‘বসন্ত উৎসব ১৪২৯’ আয়োজন করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এছাড়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে নানা স্থানে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আয়োজন চোখে পড়ে।

হলুদ, বাসন্তী, সবুজ, গোলাপি আর লাল রঙের পোশাকের আধিক্য দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা থেকে নানা স্পটে দেখা যায় ফুলের দোকান। অনেকটা চড়া দামে বিক্রি হলেও প্রিয়জনের জন্য ফুল কিনছেন কেউ কেউ।

শাহবাগ, ধানমন্ডি, পান্থপথ, রবীন্দ্র সরেবর, টিএসসি এলাকার ফুলের দোকানগুলোতেও ছিল তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ ফুলের দোকান নিয়ে। তরুণ-তরুণীরা গোলাপ, লিলি, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল কিনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে প্রিয় মানুষকে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ফুলের দাম অনেক বেশি।

পান্থপথে ভাসমান ফুল বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, আজ অন্তত ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। একটি গোলাপ ৫০ থেকে ১০০ টাকা, আর একটু বড় সাইজের গোলাপ ৮০-১৫০ টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ৪০-৭০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা দরে।

শাহবাগে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি।

ধানমন্ডির ঝিগাতলা এলাকা থেকে ৩০০ টাকায় ৩টি গোলাপ কেনেন সামিউল আলম। তিনি বলেন, ‘এমনি সময় ১০/২০ টাকায় গোলাপ মেলে। আজ দাম অনেক বেশি। তবুও ভালোবাসা দিবস বলে কথা। প্রিয় মানুষটিকে দিব বলে ফুল কিনলাম।’

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি আর রঙিন ফুলে নিজেকে সাজিয়েছেন নানা বয়সের মানুষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাকিম চত্বর, অপরাজেয় বাংলা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, কার্জন হল, এনেক্স ভবন ও শহীদ মিনার বসন্ত বরণে রঙিন হয়ে উঠেছে। মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায় হাতিরঝিল, জিয়া উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরেবর, রমনা পার্ক, মিরপুর লাভ রোড, রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন। অনেকেই ঘোরার জন্য বেছে নেন বইমেলা।

ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও লেগেছে বসন্ত আর ভালোবাসার ছোঁয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। রেস্টুরেন্ট, খাবারের দোকান ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো সেজেছে নিজস্ব ঢঙে। সেসব স্থানে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন নগরবাসী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button