ফলোআপ- “মধুমতি” এনজিওর মধুর কারিশমা শুধু গ্রাহকই নয়, কর্মীর সাথেও প্রতারণার ফাঁদ


ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
শুধু গ্রাহকই নয়, প্রতারণার শিকার হয়েছেন মধুমতি এনজিও’র বিনোদপুর শাখার কর্মী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, আমি খুব আশা করে মধূমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)’র মাঠ কর্মী পদে গত ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল চাকুরীতে যোগদান করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মধুমতির পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে আমার সব স্বপ্নই ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। এখন আমি বেকার অবস্থায় অসহায় জীবনযাপন করছি। কর্মী মাসুদ রানা, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)’র বিনোদপুর শাখার বহিস্কৃত মাঠকর্মী মাসুদ রানা। বহিস্কৃত মাঠকর্মী মাসুদ রানা বিনোদপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ পাইকড়টোলা গ্রামের মৃত চাঁন মিঞার ছেলে।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরো বলেন, আমাকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারীতে চাকরী থেকে বহিষ্কার করেছেন। আর আমার কাছ থেকে একই বছরের ৩১ মার্চে হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে নিয়েছে। কিন্তু গত ২০২১ ও ২০২২ সালের বিগত ৬মাসের বেতন বাবদ মোট ১লাখ ৬হাজার ১৪০টাকা দেয়নি। এছাড়া আমার নামীয় স্বাক্ষরিত অগ্রণী ব্যাংক বিনোদপুর শাখার ফাঁকা একটি চেকের পাতা ও স্বাক্ষরিত ১’শ টাকার ৩টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প নিয়েছেন এবং তা ফেরত দেয়নি।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদককে আরো জানান, আমি চাকুরীরত অবস্থায় মধুমতি এনজিওতে ৪৬টি শাখায় প্রায় ৪৫০/৫’শ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলো। এখন শুনছি, টাকা উত্তোলনে প্রতিটি গ্রাহকই চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। যা আমার এলাকাতেও আছে।
সাক্ষাতকালে আরো জানা গেছে, বিনোদপুর শাখায় ৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেককেই ব্যধ্যতামূলক প্রায় ৫০ লাখ টাকা করে ৪ কোটি টাকার এফডিআর করিয়েছে। তারপর থেকে আমার কিছু জানা নেই।
শুধু এখানেই শেষ নই, মধুমতি এনজিও’র এমন আগ্রাসীর হাত থেকেও রেহায় পাননি একই গ্রামের প্রতিবন্ধী জিয়ারুল। তিনি বলেন, আমি একটি ছোট পান সিগারেটের দোকানদার। ভবিষ্যতের আশায় প্রতি মাসে ৫’শ টাকা করে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় ডিপিএস বাবদ জমা দিয়েছি। প্রয়োজনের তাগিদে আমার সঞ্চিত টাকা উত্তোলন করতে গেলে তাঁরা বিভিন্ন টালবাহানা করছে। এনিয়ে আমি চরম বিপাকে পড়েছি।
ওই গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী সাহেলা বেগম জানান, আমার স্বামী ১লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা রেখেছিল। অনেক ঘুরাঘুরির পর প্রায় ৬মাস পূর্বে ১লাখ টাকা উঠা হলেও কৌশল করে কয়েকদিন পর আমার চাচাতো ভাসুর একরামুল হকের মাধ্যমে ওই ১লাখ টাকা নিয়ে তাঁর নামে জমা রেখেছে। তবে, বাকী ৯০ হাজার টাকা উঠাতে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছি।
গত কয়েকদিন থেকে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয় এর টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় গেলেও বিভিন্ন কৌশলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে পাঠাচ্ছেন তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। দাদনচক শাখার একজন বৃদ্ধ নারী গ্রাহক রহিমা বেগম ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৫ টাকা উত্তোলন করতে এসে, তিনি টাকা না পেয়েই মিডিয়ার সামনে হাউ-মাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি সোমবারও অফিসে টাকা উত্তোলন করতে গেলেও আবার তাকে ফিরিয়ে পাঠান।
অন্যদিকে, শিবগঞ্জ ইসরাইল মোড়স্থ মধুমতি শাখায় কয়েকজন গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে আসলে তাদের সাথে কথা কাটকাটি করতে দেখা যায়। এসময় একজন নবীন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করলে তাঁর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং ভিডিওটি ডিলেট করিয়ে দেন।
মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)’র অডিট অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম কোন মন্তব্য না করে জিএম’র সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এব্যাপারে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)’র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ইসলাম হোসেনের সাথে ০১৭০৫-৪৬২৯৫০ এ নম্বরে রবিবার ও সোমবার একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে “যেকোন সময় পালাতে পারে অবৈধ এনজিও মধুমতি” (১ম পর্ব) ও “মধুমতি এনজিও থেকে জনগণের দেড় কোটি টাকা নিয়ে তিন শাখার তিন কর্মী উধাও” (২য় পর্ব) শিরোনামে দৈনিক উপচার ও কয়েকটি নিউজ পোর্টালে ধারাবাহিক দুটি প্রতিবেদন হলে তদন্ত শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
তারই ধারাবাহিকতায়, গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে “সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে কর্মীরা উধাও” গ্রাহকের টাকা নিয়ে টালবাহানা শিবগঞ্জের মধুমতি এনজিও’র ও গত ১৮ নভেম্বর অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মধুমতি এনজিও পরিচালক গ্রেফতার শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর গ্রাহকগণ সোচ্চার হোন এবং টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে গিয়ে টাকা পেয়ে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস কোন মন্তব্য না করে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুমের মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়েও রিসিভ না হওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।