সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ! চড়ামুল্যেই কিনতে হচ্ছে আলু-পেঁয়াজ, ডিম
বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।


নিজস্ব প্রতিনিধি: বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এই তিনটি খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বরং সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নানা অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে এই পণ্য তিনটি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। যশোরের সকল বাজার ও মুদি দোকানের একই চিত্র।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান শেষ হলে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই পণ্য বেচাকেনা করছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই। তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা নেই। অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম ঘোষণা করলেও পাইকারি বাজারে সেই দামে তারা কিনতে পারছেন না এই তিন পণ্য।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কিছু কিছু সময়ে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। বাজার থেকে কর্মকর্তারা সরে যাওয়ার পরপরই আবারও আগের দামে পণ্য বিক্রি শুরু হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, আলু ও পেঁয়াজ-এই তিনটি খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর দেশি ডিমের পিস সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে। জরুরি এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এগুলো।
মঙ্গলবার সরেজমিনে যশোরের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা, প্রতি পিস ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা করে। এছাড়া দেশি হাঁস মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা করে। বাজারে সরকার নির্ধারণ করে দেওয়ার আগেও এই একই দামে বিক্রি হয়েছে এসকল খাদ্য পণ্য।
বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সামছুল আলম বলেন, পাইকারি বাজারে আগে যে দাম ছিল এখনও সেই দামই আছে। আমরা কমে কিনতে পারলেই তো কম দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারব। প্রতি কেজি আলু-পেঁয়াজ থেকে দুই-তিন টাকা লাভ করতে পারলে তো আর কিছু লাগে না। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম বেশি।
পাশের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, এখন আর আগের মতো বেচা-বিক্রি নেই। কারণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাজারে মানুষের আয় কম। ফলে যার যত টুকু না নিলেই নয়; সেই ক্রেতা ততটুকুই কিনছেন। আগে প্রতিদিন দুই বস্তা আলু বেচতাম। এখন এক বস্তাও বিক্রি হয় না। আবার লাভও কম হচ্ছে। সরকার যেই জায়গায় ধরার দরকার সেই জায়গায় ধরলেই তো হয়।
ডিমের দোকানে কথা হয় ক্রেতা মোরশেদ আলমের সাথে। তিনি বলেন, আগের চেয়ে কিছুটা ডিমের দাম কমেছে। আগে যেখানে প্রতিপিস ডিম কিনতাম ১৪-১৫ টাকা, এখন কিনছি ১২ টাকা ৫০ পয়সা। বাজারে ডিমের দাম কমলেও সরকারের বেধে দেওয়া দামে ডিম মিলছে না।
খুচরা ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, ৮৫-৯০ টাকার নিচে নেই দেশি পেঁয়াজ। তবে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের না খেয়ে থাকতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের একটি সূত্র জানায়-বাজারে অভিযান চালিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেস্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে-দাবি সূত্রের।