বিনোদন

বিদেশী সিনেমা আমদানি করতে না দিলে হল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা

বিদেশী সিনেমা আমদানি করতে না দিলে সিনেমা হল একে একে সব বন্ধ করে দেয়া হবে ঘোষনা দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা।বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। সেই সিনেমা প্রদর্শন করে দিনের পর দিন লোকসান গুনছেন হল মালিকরা। আজ তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এমনটাই জানালেন প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

রিয়েল তন্ময়, বিনোদন প্রতিনিধি: শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়ে সিনেমা হলের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। সমিতির নেতারা বলেন, চার বছর আগেও সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ২৪০। এখন নিয়মিত চালু হলের সংখ্যা মাত্র ৪০। দেশের সিনেমা হল সব গোডাউন হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় যদি হিন্দি ছবি না চালাতে দেওয়া হয় তাহলে আমরা হল বন্ধ করে দেব।

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, হিন্দি ছবি না চালাতে দিলে এখন আর হল চালু রাখার উপায় দেখছি না। সিনেমা হল চালু রাখার আর কোনো বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না বিধায় বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি। সুদীপ্ত দাস ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির ঘোষণা দেন। তবে এখনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সায় পায়নি।

দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে গেল দশ মাসে মুক্তি পাওয়া ৪০টি বাংলা সিনেমার হল রিপোর্ট জানিয়ে দেশের সবেচেয়ে পুরানো সিনেমা হল লায়ন সিনেমাসের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, আমার লায়ন সিনেমা হলটি মাল্টিপ্লেক্স করেছি। এরপর দশ মাসে আমার এখানে ৪০টি বাংলা সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই ৪০টি সিনেমা চালিয়ে মাত্র ৫৩ হাজার টিকিট বিক্রি করেছি। এরমধ্যে ‘পরাণ’ এবং ‘হাওয়া’ সিনেমা দুটির টিকিট সেল হয়েছে মোট ৩৬ হাজার। আর বাকী ৩৮টি সিনেমার ক্ষেত্রে মাত্র ১৭ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি অনুদানের এমন সিনেমাও আছে যেগুলো চালিয়ে একটি শোতে একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। তাহলে আমরা কীভাবে সিনেমা হল খোলা রাখবো। এমন চলতে থাকলে আমাদের সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমা টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে সিনেমা আমদানির বিকল্প নেই।

অনুদানের সিনেমা দেখতে লোক সমাগম হয়না উল্লেখ করে মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, সরকার কাদের ৭০ লাখ টাকা অনুদান দেয়? আমরা লক্ষ্য করেছি এসকল সিনেমা মাত্র ১০ লাখ টাকায় নির্মিত হয়। আর বাকি টাকা পকেটেস্থ করে। সৎভাবে কোনো অনুদানের সিনেমাই তারা বানাচ্ছেন না। তাহলে দর্শক কেনো টাকা দিয়ে ঠকতে আসবে?

তিনি আরো বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনও এখন হিন্দি ভাষাটা কমবেশি বোঝেন, তাহলে সমস্যা কোথায়? পাকিস্তানের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উদাহরণ টেনে এই খালেক বলেন, এক দশক আগেও পাকিস্তানে নিজস্ব প্রডাকশন ছিলো না। তখন তারা বলিউডের শরাপন্ন হন। এ সময় সেখানে প্রচুর সিনেপ্লেক্স আইমেক্সের মতো প্রতিষ্ঠানও সেখানে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করে। পাশাপাশি পুরানো সিনেমা হলগুলো রেনোভেট করা হয় একই সঙ্গে নিজস্ব সক্ষমতা পরীক্ষায় নামে তারা। একপর্যায়ে তারাও দিল লিজেন্ড অব মাওলা জাটের মতো সিনেমা নির্মাণ করে। সিনেমাটি পাঠান আসার আগে রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে। এখন কিন্তু পাকিস্তানে বলিউডি সিনেমা আসা বন্ধ তারাই এখন প্রচুর বাজেট দিয়ে সিনেমা বানাচ্ছে। আমরাও সেটা অনুকরণ করতে পারি। যখন প্রয়োজন হবে বন্ধ করে দিবো।

এক প্রশ্নের জবাবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, দেশের সিনেমা হল সব গোডাউন হয়ে যাচ্ছে। ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছেনা বলেই এসব হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দাবি করে দেশের বর্তমান হলের সংখ্যার কথা জানালেন হল মালিক চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের কাছে প্রদর্শক সমিতির নেতারা প্রশ্ন করেন হল যদি না চলে, হল যদি বন্ধ হয়ে যায় দেশের সিনেমা চালাবে কোথায়? পাশাপাশি তারা হিন্দি ছবি আমদানি করে না চালাতে দিলে হল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ব্যাপারে তারা দ্রুত সরকারের যথাযথ সিদ্ধান্তও চান।

বিদেশি সিনেমা এলে দেশের অনেক শিল্পী কলাকুশলী বেকার হয়ে পড়বেন এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্দুল খালেক পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, এখন কি সিনেমার শিল্পী, কলাকুশলীরা ভালো আছেন?

সরকার দাবি মেনে না নিলে কবে নাগাদ হল বন্ধ করা হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নর উত্তরে নেতারা আগামী ঈদের আগেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।

একবার চাইছেন হল বন্ধ ঘোষণা করতে আবার কারো কারো আশার বাণীতে লোকসান যেনেও খুলে রেখেছেন বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা হল। সর্বশেষ উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানিতে কালক্ষেপনে সমিতি বিরক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলেও উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে অগোছালো, ঠিক কি করলে কোন পথে উত্তরণ হবে সেটাই বোঝাতে পারছেন না। গণমাধ্যমের প্রশ্নবাণে একপর্যায়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button