ব্যাংকে নগদ টাকার ওপর চাপ বেড়েছে

বিবিএস নিউজ ডেস্ক: মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার তুলনায় জমা হচ্ছে কম। এতে করে ব্যাংকে নগদ টাকার ওপর বেশ চাপ তৈরি হয়েছে। মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর চাহিদা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নগদ টাকার সরবরাহ বাড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে প্রচলনে থাকা ফিজিক্যাল মুদ্রা বা নগদ আকারে ছিল রেকর্ড ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। গত ৪০ দিনে বেড়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। মানুষের হাতে টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। মানুষের হাতে টাকা ধরে রাখার প্রবণতা কমাতে না পারলে আগামীতে নগদ টাকার ওপর চাপ আরও বাড়বে। এ ধরনের পরিস্থিতি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট বিভাগ থেকে উচ্চ পর্যায়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সাধারণত মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে খরচ করে। ফলে কোনো না কোনো উপায়ে তা আবার ব্যাংকে চলে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্য, দৈনন্দিন খরচ মেটানো, ব্যাংকের ভল্টে জমাসহ বিভিন্ন উপায়ে চাহিদার ভিত্তিতে টাকা ছাপানো হয়। সাধারণত কোরবানি ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। তবে এখন হঠাৎ করে নগদ টাকার চাহিদা অনেক বেড়েছে। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। গতকাল সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ধারের যে চাহিদা জানিয়েছিল, তার বিপরীতে কেবল অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক ৭০ শতাংশ সরবরাহ করা হয়েছে। নগদ কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। তবে এর আগে কয়েক দিন বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে মোট আমানত রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফিজিক্যাল ফরম তথা ছাপানো নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। প্রচলনে থাকা নোটের বাইরে একটি বড় অংশ ‘অপ্রচলনযোগ্য’ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্টসহ বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় জমা আছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জুলাইয়ে কোরবানি ঈদের আগে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা প্রচলনে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ঈদের পর প্রচুর টাকা জমার ফলে ওই মাস শেষেই তা আবার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। পরে প্রতি মাসে কমতে কমতে গত অক্টোবরে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। তবে অক্টোবরের পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রচলনে থাকা নোটের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সরকারি-বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ধারের জন্য এলেও এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গতকাল চাহিদার ৭০ শতাংশ দেওয়া হয়। অবশ্য মোট কত টাকা দিয়েছে তা জানা যায়নি।
তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক ৩ হাজার ৭০০ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংক পেয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এসব টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ সমকালকে বলেন, এটি ঠিক যে, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ওপর চাপ আছে। তবে জনতা ব্যাংকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে তাদের সমস্যা নেই। তবে সরকারি এলসির বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। এর বিপরীতে ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে পাওনা ৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তারা এখনও পরিশোধ করেনি। কয়েক দিনের মধ্যে এ অর্থ পেলে তাদের আর সমস্যা থাকবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৬২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে উঠে এসেছে ৫৮ হাজার কোটি টাকার মতো। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে উঠেছিল আরও ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশের মতো। আবার সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড মূল্যস্ম্ফীতি হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য কমছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত রিজার্ভ তথা নগদ অর্থ ছিল ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত জুনেও যা ২৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ছিল। আর গত বছরের জুন শেষে ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে সিআরআরের (বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা) অতিরিক্ত এবং এসএলআরের (বিধিবদ্ধ তারল্য) অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ কমে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩২৫ কোটি টাকায় নেমেছে। চলতি বছরের জুনেও যা ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ছিল। আর গত বছরের জুন শেষে ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।