মুক্তিযোদ্ধা মুয়াজ্জিনের চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং ছিল
কেউ পুলিশ, কেউ চিকিৎসক, কেউ সামরিক বাহিনীর মেজর, কেউবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা সবাই একসময় দেশের জন্য হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। এমনই গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘ওরা ৭ জন’। খিজির হায়াত খান পরিচালিত সিনেমাটি ৩ মার্চ মুক্তি পেয়েছে দেশের ২৬টি হলে।


বিবিএস বিনোদন ডেস্ক: এতে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। তিনি মুখোমুখি হয়েছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের। ওরা ৭ জন সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে নানান ভাবনার কথা জানিয়েছেন একান্ত আলাপচারিতায়। লিখেছেন মহিউদ্দিন মাহি
যুদ্ধের গল্পে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই…
যুদ্ধের গল্প আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প আমার কাছে ভিন্ন ব্যাখা দাঁড় করায়। যে কারণে আমরা এটাকে শুধু যুদ্ধ বলি না, বলি ‘মুক্তিযুদ্ধ’। তাই আমার কাছে অন্য যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আলাদা। মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটাই আমাদের জন্য আবেগের। যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশের জন্ম, যে গৌরবময় ইতিহাসের গল্প আশৈশব শুনে আসছি, সেই সময়ের গল্পে একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করব ভেবে প্রথমত প্রচণ্ড আবেগী হয়ে পড়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধারা তো আমাদের হিরো। মুক্তিযুদ্ধের একটা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকা বাংলাদেশের যেকোনো অভিনেতার জন্য গৌরবের। অন্যরকম একটা অনুভূতি, উদ্দীপনা আমাকে গ্রাস করে।
এ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কেমন প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?
প্রথমত মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়েছে, পড়তে হয়েছে। ওই সময়ের সর্বস্তরের মানুষ কেন এতটা স্বাধীনতাকামী হয়ে উঠল? সাধারণ মানুষ কেন অস্ত্রধারী যোদ্ধা হয়ে গেল? একটা সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে জীবন বাজি রাখল কীসের সাহসে? কতটুকু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিল তারা? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে সেগুলো নিজের ভেতর ধারণ করেছি। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বুঝতে চেয়েছি তখনকার সময়ে তাদের মানসিক অবস্থাটা। আমার চরিত্রটি মসজিদের মুয়াজ্জিনের। সোলাইমান কাজী নাম। ধর্মীয় রীতি পালনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে আমাকে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ভিত্তি অসাম্প্রদায়িক চেতনা এ চরিত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ, তাই চরিত্রটি নিয়ে বাড়তি মনোযোগ ছিল। বাকিটা পরিচালক খিজির হায়াত খান ভাইয়ের নির্দেশনা মেনে চলেছি। শুটিং শুরুর আগে থেকে পরিচালক আমাদের অনেক রিহার্সাল করিয়েছেন। যেহেতু ব্যাটলফিল্ড স্টোরি, তাই কঠিন ট্রেনিং করতে হয়েছে।
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমায় ছিলেন রোমান্টিক চরিত্রে। সেখান থেকে এবার মুক্তিযোদ্ধা মুয়াজ্জিন। এ চরিত্রটিতে অভিনয় করতে গিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
সোলাইমান কাজী চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং আমার জন্য। একজন মুয়াজ্জিনের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার যে কারণ সেটা প্রতিষ্ঠা করার অনুভূতি ছিল কোনো নতুন কিছু আবিষ্কারের মতো। সমাজে ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী একজন মুয়াজ্জিন মানবতার অপমানকে অধর্ম জ্ঞান করে যুদ্ধে যায়। এখানে অনেক সুযোগ ছিল অভিনয়ের। আমি চেষ্টা করেছি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে কালে কালে। তার ভিড়ে ওরা ৭ জন দর্শককে কি নতুনত্ব দেবে?
মুক্তিযুদ্ধটা আমাদের সবার কাছে একই রকম গৌরবের। তবে এর নানান গল্প, উপস্থাপন একেকভাবে দর্শককে আকৃষ্ট করে। একটা সিনেমা দেখার পেছনে দর্শকের যে আগ্রহ কাজ করে তার সবকিছুই ওরা ৭ জনে আছে। পুরা গল্পে টানটান উত্তেজনা আছে, যুদ্ধের সিনেমায় যা অবশ্যই প্রয়োজন। এ সিনেমা দর্শকদের হাসাবে, কাঁদাবে, নতুন করে গৌরবের অনুভূতি দেবে। আর এর সংলাপ, ব্যাটলফিল্ড অ্যাকশন দর্শকদের মুগ্ধ করবে। এটা বিগ বাজেটের ছবি। নিজেদের গৌরবগাথা নিয়ে সুনির্মিত একটা ছবি। এ কারণেও দর্শক দেখতে যাবে আমার বিশ্বাস।
এখন পর্যন্ত কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমি বলব খুব ভালো। সিনেমার টিমের সঙ্গে বিভিন্ন হলে গিয়েছি। দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখেছি। এর গল্প, নির্মাণের মুনশিয়ানা ও শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করছেন সবাই। আমার বিশ্বাস, দিনে দিনে আরও দর্শক বাড়বে।
নতুন কী কাজ আসছে আপনার?
বেশ কিছু কাজ করেছি। ঈদে আসবে অনেক। কাজের মাধ্যম বেড়েছে। তাই বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হচ্ছে এখন। কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায়। ওটিটি ও সিনেমায়ও হয়তো শিগগিরই চমক দিতে পারব।