ক্রিকেটফুটবল

রঙিন ইংল্যান্ড, মলিন বাংলাদেশ

বিবিএস স্পোর্টস ডেস্ক: ওয়ানডেতে তিনশ প্লাস রান তাড়া করে জয়ের জন্য যে ব্যাটিং পরিকল্পনা প্রয়োজন তার ছিটেফোঁটাও করতে পারেনি বাংলাদেশ এই ম্যাচে। শুরুটাই হলো ভয়াবহ দুর্যোগে। প্রথম ওভারেই লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট। খানিকবাদে মুশফিকও ফিরলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ৯ রানে হাওয়া ৩ উইকেট। সেই দুঃস্মৃতি মনে করে তামিম জানান, এমন ম্যাচে সামনে বাড়া দুষ্কর। তবে শুরুর এই ঝড় কিছুটা সামাল দিলেন তামিম-সাকিব জুটি। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১১ বলে যোগ হয় ৭৯ রান। কিন্তু সেই কৃতিত্ব ম্লান হয়ে গেল অধিনায়ক তামিমের অস্বাভাবিক স্লো মেজাজের ব্যাটিংয়ের কারণে।

Google News গুগল নিউজে বিবিএস নিউজ 24’র খবর পড়তে ফলো করুন

৬৫ বলে ৩৫ রানের এই ব্যাটিং দিয়ে তামিম আসলে কি করতে চাইলেন, সেটাই বড় রহস্য! ৯ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে সামনে টেনে নিয়ে যাওয়া মুশকিল কাজ, মানছি। কিন্তু শুরুর সেই ধাক্কা তো তামিম বেশ কাটিয়ে উঠেছিলেন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটিতে। সমস্যা বাঁধলো তামিম যখন ত্রিশের ঘরে গেলেন তখন। শুরুর ৩৩ বলে ২৮ রান করার পর তাামিম হঠাৎ করেই যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেলেন! প্রায় প্রতি বলেই অতিরিক্ত মাত্রায় ডিফেন্সিভ হয়ে পড়লেন। উইল জ্যাকসের নিরীহ দর্শন বলও শুধু ঠেকিয়ে গেলেন। মাঝপথে তামিমের এই ধীরগতির ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সামনের বাড়ার পরিকল্পনা ছন্দপতন হলো। নিজের খেলা শেষ ৩২ বলে মাত্র ৭ রান যোগ করলেন তামিম! স্কোরবোর্ড তখন আস্কিং রানরেট বেড়েই চলেছে। সেই তাপেই পুড়লো তামিমের ব্যাটিং। ব্যাটিংয়ে এমন জটিল পরিস্থিতি নিজেই তৈরি করেন তামিম। বল নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু রান যোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে সামনে বেড়ে যে শট খেলে তামিম উইকেট দিয়ে এলেন তাকে বলে হতাশা! ফ্রাস্টেটেড শট!

১৮ ওভার ব্যাটিং করার পর দলের ওপেনার কেন তার ইনিংসের শেষ ৩২ বলে মাত্র ৭ রান করবেন? সিরিজ হারা ম্যাচে তামিমের কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর চাইতেই পারেন কোচ হাতুরুসিংহে!

হাফসেঞ্চুরির পর সাকিব আল হাসানও যেন আউট হলেন ক্লান্তির কাছে হার মেনে। জায়গায় দাঁড়িয়ে উড়িয়ে মারতে চাইলেন আদিল রাশিদকে। বল অনেক উঁচুতে উঠলো ঠিকই। কিন্তু বেশি দুরে গেল না। স্যাম কারান ক্যাচটা নিলেন। সাকিবের আউটের পর এই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কাহিনী খুবই সংক্ষিপ্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আরেকবার ত্রিশের ঘরেই আটকে গেলেন। আফিফ হোসেন দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ। লেজের সারির ব্যাটসম্যানরাও বেশিক্ষণ টিকলেন না।

প্রথম ম্যাচের মতো যথারীতি এই ম্যাচেও ব্যাটিংয়ের পুরো ৫০ ওভারের কোটা পুরো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরুতেই নিজের প্রথম স্পেলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে নড়িয়ে দিয়েছিলেন স্যাম কারান। সেই তিনি শেষের দিকে এসে ফিনিসারও বনে গেলেন। ৬.৪ ওভারে মাত্র ২৯ রানে ৪ উইকেট শিকার তার। ইনিংসের মাঝের সময়টায় স্পিনার আদিল রাশিদ তুলে নেন ৪৫ রানে ৪ উইকেট।

এই ইংল্যান্ডের পেস-স্পিন কোনটাই সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও বড় টেক্কা দিল ইংল্যান্ড, দুই ম্যাচেই। প্রথম ম্যাচে ডেভিড মালানের সেঞ্চুরি একাই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দেয়। শুক্রবার দ্বিতীয় ম্যাচে জ্যাসন রয়ের সেঞ্চুরি, জস বাটলার ও মঈন আলীর ঝড়ো ব্যাটিং ইংল্যান্ডের ‘টিম পারফরমেন্সের’ গানই গাইছে। ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে অজেয় হয়ে উঠার একটা বুক ফোলানো গর্ব ছিল বাংলাদেশের। সেই সাফল্য ফের ছিনিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজ জিতে নিল। শেষবার দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ ২০১৬ সালে।

জি, সেই দফায়ও প্রতিপক্ষ ছিল এই ইংল্যান্ড।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে হার ৩ উইকেটে। ব্যবধান জানাচ্ছে সেই ম্যাচে অন্তত লড়াইয়ে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে হার ১৩২ রানে। এই হিসেব জানাচ্ছে বাংলাদেশ হেরে গেছে অনেক আগেই।

-কখন?

ইংল্যান্ড ৩২৬ রান করার পরপরই যে! টসে জিতে মিরপুরের উইকেটে আগে ব্যাটিংয়ের কারণ ব্যাখ্যায় তামিম বলছিলেন-‘উইকেট চিটচিটে ছিল, তাই এমন উইকেটে আগে বোলিং করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু শুরুতে আমাদের বোলাররা কাজে লাগার মতো বোলিং করতে পারেননি। তাই ইংল্যান্ডের রান থামানো যায়নি।’

উইকেট চিটচিটে ছিল মানছি। কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যাটে-বলে এমনকি ফিল্ডিংয়েও গোটা দলের পারফরমেন্স যে আরো বেশি চিটচিটে!

সিরিজের স্বপ্ন হারিয়ে গেল সেই চিটচিটে চোরাবালিতে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৩২৬/৭, ৫০ ওভার, (জেসন রয় ১৩২, বাটলার ৭৬, মঈন আলী ৪২, তাসকিন ৩/৬৬, মেহেদি মিরাজ ২/৭৩)।

বাংলাদেশ: ১৯৪/১০, ৪৪.৪ ওভার, (তামিম ৩৫, সাকিব ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৩২, আফিফ ২৩, কারান ৪/২৯, রাশিদ ৪/৪৫)।

ফল: ইংল্যান্ড ১৩২ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: জ্যাসন রয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button