জাতীয়

রাত ১২টার পর শিক্ষার্থীদের মোবাইলফোন বন্ধ হওয়া উচিত: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

রাত ১২টার পর শিক্ষার্থীদের মোবাইলফোন বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আমাদের সময় আমরা লাইব্রেরিতে যেতাম। এখন সবকিছুই এই মোবাইলফোনে পাওয়া যায়। রাত ১২টা-১টা-২টা পর্যন্ত এগুলো চলে। তারা এটিতে যেভাবে মনোনিবেশ করে, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এ জাতি মেধাশূন্য হয়ে যাবে।

শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া রেখে আমরা যেভাবে মোবাইলের দিকে মনোনিবেশ করি, এটি জাতির জন্য অ্যালার্মিং একটি বিষয়। সরকারের কাছে একটা সুপারিশ থাকতে পারে যে, রাত ১২টার পরে এগুলো আর রাখা যাবে না। যারা বিদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ১২টার পরে এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। নিশ্চয়ই কানেক্টিভিটি-টেকনোলজি এগুলো প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছুরই একটা মাত্রা থাকা দরকার।

তিনি বলেন, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি না হতো তা হলে ভাষা আন্দোলন হতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েক শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা নেতৃত্ব দিয়ে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার ফলে আমাদের মায়ের ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি না হতো উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান হতো না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা ছিল যারা এ দেশের স্বাধীনতার কথা বলে তাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়ে চিরদিনের জন্য কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেবে। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণেই আইয়ুব শাহীর পতন হয়েছিল এবং অভিযুক্তরা সসম্মানে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন। এরই ধারবাহিকতায় সত্তরের নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা জয়ী হই।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনওয়া-উল-আলম পারভেজ অনেকগুলো পরিকল্পনা শুনিয়েছেন। ইচ্ছা করলে সেগুলোর বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম জবের কথা বলেছেন। এখানে আমরা যারা আছি প্রত্যেকেই কিন্তু খুবই সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। শিক্ষার্থীদের একটা পার্টটাইম জব থাকলে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সফল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থীদের সুলভ মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগে সারা জাতিকে পথ নির্দেশ করতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো জাতির বিবেক। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা যদি কোনো পদস্খলন দেখি নিশ্চয়ই সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ব্যথিত হই। বর্তমানে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের দায়িত্ব হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতকে সমুন্নত রাখা। এই পতকাকে তাদের সমুন্নত রাখতে হবে।

আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন গর্বিত ছাত্র ছিলেন। আমরা আনন্দিন যে দেশরতœ শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গর্বিত শিক্ষার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপরিচালনা করে বাংলাদেশকে একটি অনন্য মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। আমরা আশা করি ভবিষ্যতেও এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর এলাহী ও এ কে আজাদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ড. মোহাম্মদ ফারাস উদ্দীন, সিনিয়র সহ-সভাপতি শাইখ সিরাজ এবং সাবেক মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান মহসচিব মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনে তাদের ভাবনা ও প্রত্যয়গুলো বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button