জেলার খবর

রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের সুপেয় পানি লাইন স্থাপনের নামে প্রকল্প টাকা আত্নসাতের অভিযোগ

রোয়াংছড়ি প্রতিনিধি: বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা সীমান্তের এলাকার ও রুমা উপজেলাধীন ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কানান পাড়া সুপেয় পানি লাইন স্থাপনের নামে প্রকল্প টাকা আত্নসাতে অভিযোগ চেয়ারম্যান উহ্লামং বিরুদ্ধে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বান্দরবান জেলার অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৪০ মেট্রিকটন চাউল ও ১০ মেট্রিকটন গম সর্ব মোট ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য বরাদ্দ প্রদান করেন। সরকারীভাবে যার মূল্য ৪লক্ষাধিক টাকা। এতে পাঁচটি প্রকল্পে বন্টন করে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমাকে সভাপতি করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে ছাড় পত্র প্রদান হয়। তার মধ্যে ১০ মেট্রিকটন (চাউল) বরাদ্দে একটি প্রকল্পের নাম কানান পাড়া পানি পাইপলাইন সরবরাহ। সরকারী খাদ্যগুদাম সূত্র মতে, বর্তমান চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪৭টাকা ২৫ পয়সা। এই হিসাবে ১০মেট্রিকটন বা ১০ হাজার কেজি চালের মূল্য চার লক্ষ ৭৫ হাজার ৩০০টাকা। স্থানীয়রা জানায়, মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৪, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের গরীব ও অসহায়দের মাঝ হাঁস মুরগী ও ছাগল বিতরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের বিপরীতে ১০মেট্রিকটন সব খাদ্যশষ্য উত্তোলন করা হলেও প্রকল্প এলাকার গরীব অসহায় লোকজনের মধ্যে কাউকে কোনো হাঁস মুরগী ও ছাগল বিতরণ করেননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কানান পাড়া সরেজমিতে গিয়ে দেখতে পাই, প্রকল্পের টাকায় খরচ করার দূরে থাক, পানি পাইপলাইন সরবরাহের পুরোনো লাইনেও নষ্ট হয়ে যাওয়া পাইপের সামান্য জয়েন্ট পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। কানান পাড়া কারবারী লালদনখুম বম, লালটানপার বম (৫০), লালটানপার বম ও গোলময় কিম (২৭) বলেন, আমাদের কানান পাড়ায় পানি সুবিধার বাজেট দিয়েছে সরকার কিন্তু চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা টাকা তোলে কাজ না করার বিষয়টি খুব খারাপ লাগছে। বিষয়টি সামনা সামনি (সরাসরি) মন্ত্রীকে (পার্বত্য মন্ত্রী) বলতে পারলে খুব ভাল হতেন। এব্যাপারে আমরা মাননীয় মন্ত্রী বীর বাহাদুরের সামনে সরাসরি এ কথা বলতে পারব। কানান পাড়াবাসিন্দা নারী-পুরুষের সাথে জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বমসহ নির্বাচন আসলে নেতারা আসে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় খাদ্যশষ্য বরাদ্দে একটি প্রকল্প বিষয়ে বিস্তারিত এক আলাপ চারিতায় এসব কথা বলেন। আরও ১০০০লিটার প্লাস্টিকের ট্যাংকিটি ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের একটি প্রকল্প থেকে দেয়া। তাই ট্যাংকিতে লেখা আছে এলজিএসপি-৩। পাড়ায় যে পানির পাইপ লাইনটা রয়েছে, সেটা ১০বছর আগে উপজেলা পরিষদ থেকে দেয়া। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দে দেয়া আরেকটি প্রকল্প নতুন পাড়া বেসরকারী স্কুলে আসবাবপত্র বিতরণ। বরাদ্দ- ১০ মেট্রিকটন। ওই বিদ্যালয়েও কোনো আসবাবপত্র বিতরণ করা হয়নি বলে জানান শুক্রমনি পাড়া প্রধান কারবারী সম্বুনাথ তঞ্চঙ্গ্যা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুনথন বম। এব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ১নং পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, আমি আপনার সাথে দেখা করব।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও প্রকৌশলী শাখার কার্যসহকারী উনেউইন বলেন, রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের এসব গৃহিত প্রকল্পের বিপরীতে বিল ভাউচার দাখিল করলেও সেখানে দায়িত্বরত জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম কর্তৃক অনাপত্তি হয়। তখন বিল ভাউচারগুলো গ্রহণ করে মাস্টাররোল সমন্বয় সাধন হবে। পিআইও উনেউইন বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ভারতে রয়েছেন। তিনি ফিরলে বিষয়টি তাঁকে সব জানিয়ে দেয়া হবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম বলেন, প্রকল্পগুলো ব্যাপারে মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে গৃহিত প্রকল্প এলাকার কারবারী বা প্রবীনদের সেখানে কি কাজ করা হবে তা জানিয়ে রাখছেন। কিন্তু এপর্যন্ত প্রকল্প চেয়ারম্যান বা পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং তাঁকে (জুয়েল বমকে) একবারও প্রকল্পের কাজ নিয়ে যোগাযোগ করেননি, বলেন জুয়েল বম।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সভাপতি লালনুনোয়াম বম প্রকল্প নিয়ে কাজে না করে খাওয়া, এটা অন্যায় ও অনিয়ম। এসব দুর্নীতি কাজ যাতে না করে, তাই এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। এবিষয়ে প্রতিবেদন আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো যায় কিনা, সেটা তাঁর কমিটি সভা করে মতামত নেবেন বলে দুপ্রক সভাপতি লালনুনোয়াম বম জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button