তথ্যপ্রযুক্তি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা কতটা নিরাপদ

নারী ভুক্তভোগীর ছবি, ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা বা যেকোনও পরিচিতিমূলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা কমেন্ট করে কিংবা কাউকে ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ বাড়ছে দিন দিন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা আশঙ্কাজনকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগকে সংশ্লিষ্টরা ‘ডক্সিং’ বা অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিবিএস তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: নারীর প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি অভিযোগের বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে এ বিষয়টি সামনে আসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের (পিসিএসডব্লিউ) কাছে।

যদিও পিসিএসডব্লিউর কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির কিংবা ভুক্তভোগী হয়ে যেকোনও নারী পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগে যোগাযোগ করলে তাদের অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডক্সিং অপরাধ ছাড়াও ইমপারসোনেশন, আইডি হ্যাক ব্ল্যাকমেলিং ও সাইবার বুলিং, আপত্তিকর কন্টেন্ট ছড়ানো, মোবাইল হ্যারাসমেন্টের মতো হয়রানির অভিযোগ পড়ছে এই বিভাগে।

পিসিএসডব্লিউতে অভিযোগ করার জন্য ফেসবুক পেজ, হটলাইন ও ইমেইল নম্বর ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনও হয়রানির শিকার নানা বয়সী নারীরা যোগাযোগ করতে পারছেন।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগ বলছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫৪টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে সাইবার স্পেসে ডক্সিং অপরাধে হয়রানির শিকার হয়ে ৩১ ভাগ নারী অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীর ছবির নাম বা যেকোনও পরিচিতি তথ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী সেজে হয়রানি; যাকে ইমপারসোনেশন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়; সেখানে ভুক্তভোগী নারীর সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ। সামাজিক যোগাযোগের কোনও আইডি বা ইমেইল অ্যাড্রেস বা অন্য কোনোভাবে ডিজিটাল তথ্য হ্যাক করার অপরাধে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ ভাগ নারী।

এ ছাড়া টাকা দাবি করা, আপত্তিকর ছবি বা আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলা, আপত্তিকর ভাষায় চ্যাট করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেন ১৯ ভাগ নারী। ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন পোস্টে বা ম্যাসেজের মাধ্যমে আপত্তিকর ভাষায় কমেন্ট ও মেসেজ করা এবং পর্নোগ্রাফি ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন আট ভাগ নারী। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে বা ম্যাসেজে বা ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন চার ভাগ নারী। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কল বা মেসেজ দেওয়ার অভিযোগ করেন ৫ ভাগ নারী।

অভিযোগকারী নারীদের বয়সসীমার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার চার ভাগ নারী ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে। ১৮ বছরের নিচে ১১ ভাগ কিশোরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২৫ ভাগ তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হয়রানি শিকার হচ্ছেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণীরা, যার সংখ্যা ৬০ ভাগ।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯৫৮ জন নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগেকে অভিযোগ করেন। ৮৩১ জন পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। যে কারণে ১৫ হাজার ৯৮৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৬৭৪ জনের অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মুনতাসিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও নারী হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের শরণাপন্ন হয়, প্রথমে সেসব অপরাধীর ধরন সম্পর্কে আমরা অবহিত হই। ভুক্তভোগীকে যদি কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন অনুভব করি. তাহলে আমরা ভুক্তভোগীকে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনি। আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি কিংবা মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরাধী এক এলাকায় থাকে এবং একটিম অন্য এলাকায় থাকে দূরত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানাগুলো সহায়তা নিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা নিজেরাও এনালাইসিস করি কোন ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সেসব বিষয় এনালাইসিস করে আমরা আমাদের মতো করে সেসব বিষয়ের ওপর নজর রাখি। সব সময় শুধু কোনও পুরুষ দ্বারাই কোনও নারী হয়রানির শিকার হন, সে রকম অভিযোগ যেমন হরদম আসে, ঠিক তেমনি নারীদের দ্বারা নারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ ছাড়া কারও সঙ্গে কারোর সম্পর্কের ছেদ পড়লেও অনেক সময় অনলাইনে নাজেহাল করার অপচেষ্টা অনেকে চালায় বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button