স্কুলের কাঁটাতার পেরোতে গিয়ে আহত,আদালতে অভিযোগ দাখিল!
স্কুলের কাঁটাতার পেরোতে গিয়ে আহত,আদালতে অভিযোগ দাখিল!


বড়লেখা প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে জয়নাল আবেদীন নামের এক যুবকসহ তার পরিবারকে একের পর এক ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। জয়নাল আবেদীন উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের রাজপুর গ্রামের জলিল উদ্দিনের ছেলে।
একই ইউনিয়নের নান্দুয়া (বুড়াগুল) গ্রামের আকদ্দছ আলী আখই মিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছেন জয়নাল।মামলার ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ১৫ মে জয়নাল তার ভাই রাহেল আহমদ, হেলাল উদ্দিন ও জয়নালের প্রতিবেশী রাজিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী মারপিটের অভিযোগ করেন আকদ্দছ আলী আখই মিয়া।আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগটি তদন্ত করছেন শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক।রবিউল হক বলেন, ‘আদালত থেকে তদন্তের জন্য একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’অন্য অভিযোগের মতো এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করছেন জয়নাল আবেদীন।জয়নাল বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হবার রাস্তার জায়গা তার (আখইর) দাবি করে গত প্রায় ৭-৮ মাস আগে বন্ধ করেন আখই মিয়া। বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ আমাদের রাস্তার বিষয়টি সমাধান করে দেয়নি। আমাদের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা কাদা-পানি মাড়িয়ে অন্যের জমি দিয়ে ঘুরে স্কুলে যায়। আমরাও এভাবে যাওয়া আসা করছি। অমানবিক এই ঘটনার পরও আখই থেমে নেই।‘একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করেছেন। কোথাও ‘ন্যায় বিচার’ পাচ্ছি না। সবশেষ আখই শাহবাজপুর স্কুলের সীমানার কাঁটাতার পার হতে গিয়ে আহত হন। পরে রাতের বেলা মারামারি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচারের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’ মামলায় হয়রানি হয়ে ইতিমধ্যে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ‘যোগ করেন জয়নাল।জয়নালের দাবির বিষয়টি মিল পাওয়া গেছে সায়পুর গ্রামের ফখর আহমদ ও পূর্ব দৌলতপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের কথায়। এই দুজনসহ আরও বেশ কয়েকজন আকদ্দছ আলী আখই মিয়া স্কুলের কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে হাতে আঘাত পাওয়ার বিষয়টি দেখেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলে আখই মিয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করতে পারেন এই আশঙ্কায় ফখর ও নুরুল ছাড়া অন্যরা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বক্তব্য প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।প্রত্যক্ষদর্শী ফখর আহমদ ও নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন রোববার রাত অনুমান ৮টা হবে। আমরা স্কুলের মাঠে বসে ছিলাম। স্কুলের গেট বন্ধ থাকায় সীমানার কাঁটাতার দিয়ে পার হচ্ছিলেন আখই মিয়া। এসময় তার হাতের বেশ কিছু জায়গায় কাঁটাতারে চিরে যায়। আমরা এগিয়ে গিয়ে তাকে বলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে। তিনি বলেন না চিকিৎসা লাগবে না। এমনিতেই সেরে যাবে। পরদিন শুনি তিনি মারপিটের মামলা করেছেন জয়নাল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।’অন্যদিকে আকদ্দছ আলী আখই মিয়ার প্রতিবেশী ব্যবসায়ী আছাদ উদ্দিন বলেন, ‘আখই ভাই ১৫ মে রাতে মারামারি যে বিষয়ে মামলা করেছেন এটা সঠিক নয়। কারণ আমি দোকানে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করে দোকানেই থাকি। যে জায়গায় মারামারি কথা উল্লেখ করেছেন এখানে মারামারি হলে অন্তত একটা চিৎকার-ওতো শুনার কথা। কিন্তু এরকম কিছুই হয়নি। জয়নালকে হয়রানির জন্য এটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’তবে জয়নাল উদ্দিনের দাবির বিষয়গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান, আকদ্দছ আলী আখই মিয়া। মুঠোফোনে আলাপকালে আখই বলেন, ‘কাঁটাতারে পড়ে আহত হওয়ার যে বিষয়টি বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। জয়নাল আগে আমার স্ত্রীর হাত ভেঙে দিয়েছি। এই মামলায় সে জেল খেটেছে। জেলে যাওয়ার আগে সে ও তার পরিবারের লোকজন রাতের বেলায় একা পেয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। এতে আমি হাতে আঘাত পাই। চিকিৎসাও করেছি।