দেশজুড়ে

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বিদায়

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বিদায়

মীর জুবাইর আলমঃ

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন গত ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারিতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করে  আড়াই বছরে নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নানা সংকটের সমাধান করেছেন। রুটিন দায়িত্বের বাইরেও সাধারণ মানুষের জন্য করেছেন নানা কাজ।করোনাকালের কঠিন পরিস্থিতি চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছেন জেলায়

গত বছরের আগস্টে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনেও সমঝোতায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বদলিজনিত কারণে ইশরাত জাহানের বিদায় বেলায় তাই এলাকাবাসী তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। তার নতুন কর্মস্থল হবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে।

জেলার অধিবাসীরা বলছেন, প্রশাসক ইশরাত জাহান। মাঠে নেমে কাজ করায় নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ বাইপাস সড়কের পাশ থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণ করেছেন তিনি। পুরোনো খোয়াই নদীর পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সাধারণ রোগীদের জন্য জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ১০টি কেবিন স্থাপন, শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য শিল্পকলায় সুইমিংপুল স্থাপনসহ উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তিনি।

উপজেলা পর্যায়েও কাজ করেছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণের তদারকি করেছেন নিপুণভাবে। সর্বশেষ শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে মাধবপুরে ‘হবিগঞ্জ শিশুপার্ক’ নির্মাণ করেছেন। শহরতলির ধুলিয়াখালের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় শিশুপার্ক নির্মাণ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়  প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করে ভূমিহীনদের মাঝে ঘর হস্তান্তরে করেছেন যে কোনো দুর্নীতি ও নিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান।

ইশরাত জাহান সব সময় জেলার সাধারণ মানুষের পাশে বন্ধুর মতো ছিলেন বলে মন্তব্য স্থানীয় বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, কৃষক-মজুর-শ্রমিক থেকে শুরু করে অসহায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন তিনি। বাহুবলের তাঁতি সম্প্রদায়কে পুনর্বাসনেও ভূমিকা রেখেছেন। পাশাপাশি তার সুন্দর ব্যবহারেও মুগ্ধ সবাই। সে কারণেই তার বিদায়ের খবরে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, সেখানে ফুটে উঠেছে তার প্রশংসা।

বাহুবলের তাঁত বোনা সমবায় সমিতির সভাপতি স্বপ্না বর্মা ও সম্পাদক শিল্পী বর্মা জানান, বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে অনেকে তাঁত পেশা বদলে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁতিরা পুনরুজ্জীবিত হতে পেরেছেন।সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, ইশরাত জাহান একজন ভালো অফিসার। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস নির্মাণে সঠিক নির্দেশনা ও তদারকি করেছেন।হাইস্কুল শিক্ষক সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ইশরাত জাহান বাচ্চাদের সাঁতার শেখাতে সুইমিংপুল নির্মাণ করেছেন।

এ উদ্যোগ আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে।’জেলা প্রশাসক ইশরাতের প্রশংসা করছেন পরিবেশ অধিকার কর্মীরাও। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সেহেল বলেন, ‘আমরা পরিবেশ বিষয়ে যখই বিদায়ী জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের কাছে গেছি, তিনি সব সময় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। তার মতো জনবান্ধব জেলা প্রশাসক সব সময় পাওয়া যায় না।’জানতে চাইলে ইশরাত জাহান বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে। কতটুকু পেরেছি, তা প্রিয় হবিগঞ্জবাসী ভালো জানেন। সবার কাছে দোয়া চাই, এভাবেই যেন মানুষের পাশে থাকতে পারি সব সময়।‘

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button