শেখ রায়হান হোসেন,
পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি।
পাটকেলঘাটার লোকনাথ ক্লিনিকের গাড়িচালক সবুজের যাদু বিদ্যায় নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিত ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সোস্যাল মিডিয়াং নবজাতক উদ্ধারের একটি সাজানো খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তথ্য অনুসন্ধানকালে শনিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে ক্লিনিকের মালিক পুলক কুমার পালের নিকট তার ব্যবহৃত সেলফোন ৫টা ৫৪ মিনিটে দু’বার যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লিনিকে গিয়ে কথা হয় ক্লিনিক পরিচালকের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তার গাড়ি চালক একটি নবজাতক কন্যা শিশু উদ্ধার করেছে। নবজাতক উদ্ধারে কেন পুলিশকে জানানো হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি সঠিক উত্তর দিতে না পারায় চালকের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ডেকে আনা হয় ক্লিনিকে। নবজাতক উদ্ধারের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী কুমিরা বাসস্ট্যান্ডের সোনাই সরদারের পুত্র সবুজ (২৫) এ প্রতিবেদককে জানায়, ১৪ মার্চ রাত্র আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে রুগী পৌঁছে দিয়ে পাটকেলঘাটার উদ্দেশ্যে আসছিল। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের শাকদহা ব্রীজ নামক স্থানে পৌঁছালে একটি ট্রাককে ক্রসিং করার সময় মাইক্রোবাসের লাইটে খালের দক্ষিণ পাশে পানি থেকে ১ হাত উপরে লাল কাপড়ে মোড়ানো একটি নবজাতক দেখতে পায়। এরপর সে নবজাতক উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সকালে পুলিশকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে নিজেই জানায়। এসময় তার কাছে প্রশ্ন করা হয় কোথা থেকে রুগী নিয়ে এবং কোথায় যাওয়া হয়েছিল। রুগী নেওয়ার জন্য কে ফোন করছিল ? ফোন নম্বরটা কি? দেখাতে বলা হলেও সে সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে সে কোন রুগীই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। এদিকে যে স্থান থেকে নবজাতক উদ্ধার করা হয়েছে ঐ স্থানে সাধারণ কোন সচেতন গাড়ীচালক গাড়ি থামিয়ে যায়ই পড়ে থাকুক না কেন উদ্ধার করতে যাবে না। বিপদজনক জায়গা হতে নবজাতক উদ্ধার এবং ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের আগে পুলিশকে কেন জানানো হয়নি এর কোন সঠিক উত্তর পরিকল্পনার চরিত্রে থাকা সবুজ দিতে পারেনি। এদিকে সবুজের সাথে কথা বলার আগেই ক্লিনিক মালিকের সাথে সবুজের রাত ৩টা ১০ মিনিটে ফোনে কথা হলেও সবুজ সেকথা অস্বীকার করে। ক্লিনিক মালিক জানান, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, কি বলেছিল ঘুমের মধ্যে আমার মনে নাই তবে সে বাচ্চা উদ্ধার করেছে একথা বলেনি। সবুজ নিজেই বলে সকাল ৯টার দিকে ক্লিনিক মালিককে ফোন করে বাচ্চা উদ্ধারের কথা বলেছি। এ বিষয়ে পাটকেলঘাটা থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ এ প্রতিবেদককে জানান, বাচ্চা উদ্ধার করেছে এটা সকালে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে বাচ্চা উদ্ধারের সময় পুলিশকে জানানো হয়েছিল কি’না এমনকি পুলিশের উপস্থিতি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে সকালেই জানানো হয়েছে। এদিকে ক্লিনিক এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ক্লিনিক মালিক নিজেই সকাল ৯ টার দিকে নবজাতক কন্যা শিশুটিকে ক্লিনিকের গাড়িচালক সবুজকে তার বাসায় রেখে আসতে দেখে। গত ২০১৬ সালে ১৪ অক্টোবর শুক্রবারে ক্লিনিক এলাকার মহাসড়কের পাশ থেকে আরও একটি নবজাতক কন্যা শিশু উদ্ধার করে পত্র পত্রিকায় নিজেকে বা ক্লিনিককে শীর্ষ শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তৎকালীন পাটকেলঘাটা থানার ওসির মধ্যস্থতায় ঐ নবজাতককে এক বন্ধ্যা দম্পত্তিকে দিয়ে দিয়েছিল গোপনে। এদিকে গতকাল আবারো ফুটফুটে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে সাথে এলাকাবাসী জানতে চায় এ নবজাতক উদ্ধারের অন্তরালে দূর্বিসন্ধি কি ? সাথেই থাকুন পরবর্তী অনুসন্ধান নিয়ে আবারো আসছি।