আল মামুন ঝিকরগাছা পতিনিধি ঃ
লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় একজন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়ন খাট বাড়িয়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেনের ছেলে রাকিবুল। শুক্রবার রাতে তার চাচাতো ভাই লিবিয়া প্রবাসী ফিরোজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করার পর তাদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।
সম্পত্তি বিক্রি ও জমানো টাকা খরচ করে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাকিব। রাকিবুলের চাচাতো ভাই লিবিয়া প্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়া থাকা এক বাংলাদেশি দালালের সাথে যোগাযোগ করে রাকিবুলকে লিবিয়া নিয়ে যান। সাড়ে তিন মাস আগে সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ করে রাকিবুলকে লিবিয়া পাঠান তার পরিবারের লোকজন। সম্প্রতি লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশি ও ১২ জন আহত হয়েছেন। লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের হাতে নিহত রাকিবুল ইসলাম নিহত হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন। এখন সন্তান ও সম্পত্তি দুই-ই হারিয়ে রাকিবের পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন লিবিয়া পাড়ি দেন। চার- ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তার মৃত্যুর খবরে মা-বাবা ভাই-বোন শোকে পাথর হয়ে পারেছেন।
চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন জানান, দালালের মাধ্যমে রাকিবুল পাড়ি দেন লিবিয়ায়। কিন্তু দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিবারের লোকজন টাকা দিতে রাজিও হন। এরই মধ্যে খবর এলো দালাল চক্র রাকিবুলকে গুলি করে হত্যা করেছে।
লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাদেরই একজন রাকিবুল। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না। তার চাচাতো ভাই রাতে লিবিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন, যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছে। আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। লাশ কবে দেশে আসবে, তাও জানি না।
শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিছারউদ্দীন বলেন, লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে আমার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটবাড়িয়া গ্রামের রাকিবুল নামে এক যুবকও রয়েছে