লেখকঃ প্রভাষক আমানতউল্লাহ সাকিব
ইলিশের প্রজনন নিরবচ্ছিন্ন এবং মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সরকার জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে ৬৫ দিনের এক বিশাল নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যাতে করে এই দিনগুলোতে ইলিশমাছ বাধাহীনভাবে ডিম দিয়ে প্রজনন করতে পারে। ২০মে থেকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে ২৩ জুন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল।
দীর্ঘ এই সময়ে সাগরের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে কি না জানা নেই। তবে জেলেরা থেমে নেই মাছধরা থেকে।তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ট্রলার নিয়ে, ছোট নৌকা নিয়ে এবং বড় ধরনের শিপিং জাহাজ নিয়ে মাদার চিংড়ি, অন্যান্য মাছ মারতে গিয়ে তাদের আয়ত্তের সব সামুদ্রিক প্রাণী কূলে টেনে নিয়ে এসে নির্বিচারে হত্যা করছে হাজার হাজার কাঁকড়া এবং বিভিন্ন প্রজাতির পোনামাছ।
জেলেরা প্রতিদিন সাগর থেকে মাছ ধরে সাগরপাড়েই, পাইকারি কিংবা খুচরা মাছ বিক্রি করলেও সমদ্রে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোস্টগার্ড এর অভিযান খুব একটা নজরে পড়ে না। জেলেরা স্বাভাবিক ভাবে প্রতিদিনকার মতো সাগরে গিয়ে বাধাহীনভাবে মাছ ধরে যাচ্ছে।
সাগরের কাছাকাছি বাড়ি হওয়ার সুবাদে প্রায় বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে সাগর পাড়ে বসা হয়। সাগরে নৌকা উঠা নামার যে ঘাটগুলো আছে সেখানে বেশ কদিন ধরে লক্ষ্য করছি হাজার হাজার বড় বড় মৃত কাঁকড়া পড়ে আছে। জেলেরা বড় মাছগুলো নিয়ে ছোট আকারের মাছ এবং কাঁকড়াগুলো চরেই ফেলে চলে যাচ্ছে। এসব দেখে মনে সংশয় জাগে- সাগরে মাছ ধরার জন্য দেশে কি কোন আইন কানুন আছে?
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কক্সবাজারের অন্যতম একটা আকর্ষণ হচ্ছে কাছ থেকে কাঁকড়া ঝাঁক এবং তাদের বিচরণ স্বচক্ষে উপলব্ধি করা। দিন দিন আমারা তা হারাতে বসেছি। এভাবে যদি নিধন অব্যাহত থাকে হয়তো কাঁকড়া গল্প একসময় রূপকথার গল্প মনে হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
সাগরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যারা নির্বিচারে পোনামাছ এবং কাঁকড়া নিধনের পাশাপাশি নিয়মিত মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সরকার যে উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সে লক্ষ্যে কোন ভাবে পৌছাতে পারবে না।
আসুন আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। পোনামাছ ও কাঁকড়া নিধন থেকে বিরত থাকি। আমাদের প্রকৃতি/পৃথিবী আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।
ছবিগুলো গতকাল রাতে মেরিনড্রাইভ রোড়ের রেডিয়েন্ড পয়েন্টের পুলিশ বক্সের পাশ থেকেই তোলা।
আমানতউল্লাহ সাকিব
প্রভাষক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ
উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
উখিয়া,কক্সবাজার।