জসিম উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : ছবির এই ছেলেটির নাম আরিফুজ্জামান। অত্যাধিক পরিমাণে কাল বর্ণ গায়ের রং। একটি ময়লাযুক্ত টিশার্ট আর পরনে পুরাতন ট্রেজার, ভোলাভালা মিষ্টি চেহারার আড়ালে কিছুটা আনন্দ আর কিছুটা কষ্ট গাঁথা আছে।
পেট মহাজনের কাছে হার মেনেই দিনের অনেকাংশে ক্ষুধার্তে কাটে তার। কিছুটা খাবার পেয়ে এতোটা খুশি, এতোটা পাওয়ার আকাঙ্খা তা বুঝা যায় শুধুমাত্র মনের গভীরতা বা আত্মার সাথে উপলব্ধি করে।
এমন এক নিষ্পাপ মুখ, মায়াবী চেহারার কিশোরকে সামনে আনলেন যশোরের শার্শা উপজেলার মটর মেকানিক দেশ সেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজান।
করোনা ভাইরাস দুর্যোগ কালিন সময় থেকে অসহায় দুস্থ পাগল অভুক্ত পশু পাখিকে প্রতিদিন একবেলা খবার বিতরণের অংশ হিসাবে মঙ্গলবার দুপুরে দেখা মেলে আরিফুজ্জামানের সাথে।
উপজেলার নাভারণের গ্যারেজ পট্রিতে হেলপারের কাজ করে সে। সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ শত টাকার চুক্তিতে সারাদিন হাড়ভাংগা খাটুনি খাটে রুগ্ন শরীরের কচি কচি দু হাতে।
সংসারে বাবা মা আর চার বোনকে নিয়ে অভাবী পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার আরিফুজ্জামান।
আরিফুজ্জামান শার্শার যাদবপুর গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে। গ্যারেজ পট্রিতে বাবা আক্কাস আলী রং মিস্তিরির কাজ করে অভাবের ভারে নড়বড়ে হয়ে পড়া শরীর নিয়ে।
যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে বাবার অভাবী সংসারে কিছিটা সাহায্য করার জন্য কচি কচি হাতে গ্যারেজের লোহা লক্কড়ের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার।
আরিফুজ্জামান জানায়, তার পিতা এই গ্যারেজে কাজ করতো। করোনা ভাইরাসের কারনে রংয়ের কাজ বন্ধ। পরিবারের মানুষের মুখে আহার তুলে দিতে তাকে এই পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে।
লকডাউনের এতোদিনের মধ্যে আমরা কোন ত্রান সহায়তা পাইনি। আধো আধো কন্ঠে বলে আমরা খুব কষ্টে আছি।
উদ্ভাবক মিজান বলেন, প্রতিদিনের খাবার বিতরণের অংশ হিসাবে নাভারণ গ্যারেজ পট্রিতে খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পায় এখানে শিশু শ্রম হিসাবে কাজ করছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন শিশু কিশোর।
ঐসমস্ত শিশু কিশোরদের মধ্যে আরিফুজ্জামানকে দেখে মনে হলো এক আকাশ পরিমান কষ্টে আছে সে। পরিচয়কালে জানা যায় তার অসহায় জীবন কাহিনি।
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও সমাজে এখনও অনেক কর্মক্ষেত্রে দারিদ্র্যতার কষাঘাতে শিশুদেরকে কঠিন শ্রম দিতে দেখা যায়। যে দেশে যে জাতী যত শিক্ষিত সে দেশে সে জাতী ততটাই উন্নত। তাই সমাজ থেকে অভাব দারিদ্র্যতা দুর ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন আগামীর ভবিষ্যৎ এই শিশুদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং দারিদ্র্য পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।
শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে যদি শিশু শ্রম আইন সঠিক ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা হয়। পাশাপাশি সমাজ থেকে অভাব দারিদ্র্যতা সরকারি বা বেসরকারি ভাবে দুর করা যায় তাহলে শিশু শ্রম দিনে দিনে শুণ্যের কোঠায় চলে আসবে।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা এবং সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদেরকে শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর ভুমিকা নেওয়া হোক সেই সাথে অসহায় পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করে শিশুদেরকে লেখা পড়া করে আগামীর প্রজন্মকে সঠিক ভাবে গড়ে উঠতে পদক্ষেপ নিবেন। একই সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে নজর দিয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।