আফরোজা বেগম, রংপুর
আষাঢ়ের পানি আর উজানের ঢলে অশান্ত হয়ে উঠেছে তিস্তা নদী। গেল কয়েকদিনে তিস্তা বেষ্টিত রংপুর জেলার নদীপাড়ে বেড়েছে মানুষের আহাজারি। নদীর স্বভাব সুলভ আচরণে ঘরবাড়ি হারিয়েছে অনেক পরিবার। চরাঞ্চলে পানিতে তলিয়েছে সবজি খেতসহ ফসলি জমি। তিস্তা ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সাথে সাথে পানিবন্দি হয়ে আছে দুই হাজারেরও বেশি পরিবার।
গেল ২৪ ঘন্টায় রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেড়েছে ভাঙন ঝুঁকি। দেখা দিয়েছে শুকনা খাদ্যের সাথে বিশুদ্ধ পানির সংকট। কোথাও কোমর বা হাটু পানিবন্দি ঘরবাড়িগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য। গবাদি পশু-পাখির আশ্রয়স্থল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নদীপাড়ের অসহায় মানুষরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে নদী ভাঙনে বিলীনের পথে চরের একমাত্র পাকা সড়কটি। ইতোমধ্যে সড়কটির প্রায় ৬০০ ফুট ভেঙে গেছে। এই চরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মসজিদ রয়েছে ভাঙনের মুখে। অপরদিকে শংকরদহ চরে গুচ্ছগ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখানকার প্রায় ১৫ পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে আছে নোহালী ইউনিয়নের কয়েকটি চরে ২০০ পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনা ও উত্তর কোলকোন্দ বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ২০০ পরিবার, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, বাঘেরহাট, কলাগাছি চরের ১৫০ পরিবার, মর্নেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি চর ও মনের্য়া চরের ১০০ পরিবার, গজগন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক ও আশপাশের এলাকায় ৫০ পরিবার এবং গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় ও ধামুর এলাকায় ৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু সাংবাদিদের জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর তিস্তা মূল পয়েন্টে গেট খুলে দেয়ায় গঙ্গাচড়া তিস্তা অববাহিকায় পানি বেড়েছে। এতে নদীপাড়ের পরিবারগুলোর দুর্ভোগ বেড়েছে। খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
এদিকে গঙ্গাচড়া ছাড়াও কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, শহীদ বাগ ও নাজিরদহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গাতে পানি কমে আসলেও দুর্ভোগ কমেনি। ওই চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।
অন্যদিকে পীরগাছা উপজেলায় তিস্তা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। অসহায় এসব পরিবারের মানুষের মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর জন্য গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যা দুর্গত মানুষজন।