মোঃ সালমান হোসেন সাগর
শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি।
শরীয়তপুর জাজিরা থানা এলাকায় পিতা কর্তৃক নিজ শিশুকে অপহরণের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ এবং শিশুর পিতাকে গ্রেফতার করা হয়। এই সংক্রান্তে অদ্য ৩০/০৬/২০২০ খ্রিঃ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে পিতা কর্তৃক শিশুকে অপহরণের রহস্যের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান পুলিশ সুপার, শরীয়তপুর জনাব এস. এম. আশরাফুজ্জামান।
এ সময় পুলিশ সুপার জানান আপন ছেলেকে তার বোনের বাসায় রেখে অপহরণ নাটক সাঁজানোর মুলহোতা মোক্তার হোসেন (৩৬)কে আটক করেছে জেলা পুলিশ।
এ সময় তিনি আরও বলেন, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আব্দুল বেপারী কান্দি গ্রামের সুলতান খানের ছেলে মোক্তার হোসেন খান নিজের ছেলে নাঈম (৯) কে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দোলেশ্বর গ্রামে মোক্তারের খালাতো বোন লিপি আক্তারের বাসায় রেখে এ অপহরণ নাটক তৈরী করার চেষ্টা করে। জানা গেছে, ২৯ জুন সোমবার সকাল ৮টার দিকে মোক্তার কাজীর হাট হয়ে রূপবাবুর হাটে যায়। বেলা ১২টার দিকে রূপবাবুর হাটে একটি চায়ের দোকানে চা পান করার সময় তার ছেলে নাঈম প্রসাব করার কথা বলে বিপরীত দিকে রাস্তার ঢালে যায়। এসময় হঠাৎ করে চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় জাজিরার দিক হতে দুটি মাইক্রোবাস ও কাজীরহাট থেকে আশা একটি বাসের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এরপর যানজট সরে গেলে মোক্তারের ছেলেকে আর পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানায়।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে ছেলেকে না পেয়ে কান্নাকাটি করে দুপুর আড়াইটার দিকে বাড়ী ফিরে এসে আত্মীয় স্বজনদের এই ঘটনা জানায়। ইতিমধ্যে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৭৮৮৯৯০৯৬৬ এ অপহরণকারী যার মোবাইল নাম্বার ০১৭৮৩৫১৮২১৪ থেকে মুক্তিপন চেয়ে তাকে ফোন করে বলে জানায়। বিষয়টি তার ভায়রা ভাই একই উপজেলার বাইকসা গ্রামের আব্দুল আজিজ বেপারীর ছেলে রুবেল বেপারী জাজিরা থানায় এসে জানায়। বিষয়টি অবগত হয়ে পুলিশ সুপার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তানভীর হায়দার শাওন, ডিআইও-২ সাইফুল আলম ও ডিবি পুলিশের একটি দল জাজিরা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কথিত অপহৃত নাঈম এর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অপহৃতের বাবাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পনাকারী মোক্তার হোসেন জানান, আমি অর্থনৈতিক ভাবে দারুন সমস্যায় আছি। সংসারের অভাব অনটন ও ধার-দেনা থাকায় সচ্ছল আত্মীয় স্বজন থেকে ছেলের মুক্তিপনের নামে কৌশলে টাকা পয়সা আদায়ের জন্য আমার বন্ধু সাব্বির (৩৫) এর সাথে যোগাযোগ করে ছেলেকে নিয়ে মাওয়া ঘাট পার করে খালাতো বোনের বাসায় কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ দোলেশ্বরে রেখে আসি। পরে পুলিশ জেলা পুলিশের একটি দল ওই বাসা থেকে নাঈমকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি সাঁজানো ঘটনা। এই পরিকল্পিত মিথ্যা অপহরণ ও গুমের ঘটনার কারণে মোক্তার হোসেন যেমন টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল তেমনি ভাবে সমাজে আতংক ও ভয়ের সৃষ্টি হতো। পুলিশ ধারণা করছে এই ঘটনার পরে সামাজিক হানাহানি ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারতো। বিধায় পরিকল্পনাকারী মোক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জনাব মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আজহারুল ইসলাম সরকার, পিপিএম, ডিআইও-২, জেলা বিশেষ শাখা জনাব সাইফুল আলম সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও অন্যন্য ব্যক্তিবর্গ।