আনোয়ার হোসেন নাদিম এর,অভিজ্ঞতা-ভাবনা নিয়ে লিখাঃ
রাত ১২টা.১মি.আব্দুল্লাহ বলল, আর কতক্ষণ থাকবি?
পাগলা নদীর তীরের আম বাগান। চারিদিকে গা হিম করা নিরবতা। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের তীব্র আওয়াজ টাই শুধু এখানে প্রাণের অস্তিত্ত্ব জানান দিচ্ছে।
সামনেই সরিষা ক্ষেত।সরিষা ফুল গুলোকে পরম মমতায়, কুয়াশা স্নান করিয়ে দিয়েছে।
চাঁদটা যেন সেই স্নাত সরিষা ফুলগুলোকে শুকানোর ঠিকাদারী নিয়েছে।
কিন্তু খুব বেশি যে সুবিধা করতে পারছে না তা বুঝায় যাচ্ছে।
আজ কুয়াশা ও চাঁদ টা মনে হচ্ছে তাদের নিজেদের মধ্যে কর্তৃত্ত্ব ফলানোর চেষ্টা করছে।
দুটোই আজ তাদের উদারতা প্রচন্ডভাবেই জানান দিচ্ছে।
হাঁটু জলের পাগলা নদী।
নদীর উপর কুয়াশাগুলোকে মনে হচ্ছে মেঘের ভেলা তৈরি করেছে।
শেয়ালগুলো কেন জানি আজ নিরব!!
কিন্তু পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই একটি শেয়াল দৌড়ে চলে গেল।
হয়তবা আজ তাদের মৌনব্রত।
দূরে সাউন্ড বক্সে ভোজপুরী গান বাঁজছে।
হয়ত বা থার্টিফাস্টের জন্যই এই আয়োজন।
আজকাল গ্রামের পোলাপান ও চুটিয়ে নতুন বছর উদযাপন করে!
শুনেছি সাথে নাকি ড্রিংকস ও থাকে!!
দুই বন্ধু বসে আছি আম গাছের নিচে।
চোখের সামনে দৃশ্যমান ভয়ংকর সুন্দর চাঁদনী রাত।
আব্দুল্লাহ বলল,”জীবন থেকে আরেকটি বছর চলে গেল রে বন্ধু!”
আসলেই তো তাই।
বছর গুলো কেন জানি তারাতারি কেটে যায়,
শুধু রেখে যায় কিছু বেদনা কিংবা একমুঠো আনন্দ আর অনেকগুলো মন ভোলানো স্মৃতি। দেখতে দেখতে তো অনেক বছরই কেটে গেল…
ছেলে বেলাকে মনে হচ্ছে এইতো সেই দিনের কথা।
সেই খোলসে মাছ টাকে আজও মনে আছে। কি সুন্দরই না ছিল…
আমের আচারের বোয়াম টা ছিল আমার বানানো খুদে অ্যাকুরিয়াম।
যেদিন মাছটা মরে যায়, খুব খারাপ লেগেছিল।
বা প্রাইমারি স্কুলের সেই দিনগুলোর কথা…
শুনেছি সবচেয়ে কাছের বান্ধবিটার নাকি ১২ বছরের বাচ্চা আছে!!
ক্লাস ফাইভ এ আমরা চারজন ছেলে ছিলাম সবাই এখনো বন্ধু হয়েই আছে।
হাই স্কুল জিবনটা আমার মনে হয় বেশি ভাল ছিল।
ছেলেবন্ধু গুলো কেবল পড়ার সাথীই ছিল না, তার থেকে বেশি ছিল খেলার সাথী।
এতোদিনে দুইটা জিনিস বুঝেছি….
১…যে বন্ধুত্ব খেলাধুলার মাধ্যমে তৈরি হয় তাতে কোন স্বার্থ থাকে না।তাই বন্ধু কখনো হারিয়ে যায় না।
২…মেয়েরা ভাল জিএফ , ভাল বউ বা ভাল মা অথবা ভাল বোন পারে। কিন্তু কখনোই ভাল বন্ধু হতে পারে না।
যে নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কখনো ভুলে না যাওয়ার,কত সহজেই না ভুলে গেছে সে।
মানুষ কখনো তার অতীতকে ভুলতে পারে না, হয়ত পিশাচিনিরা পারে….
হঠাৎ ডাহুক পাখি দূরে কোথাও ডেকে উঠে আমাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। আব্দুল্লাহ কয়েকবার কেঁশে উঠল।
পরক্ষণে মনে পড়ল, বসে আছি আম গাছটার তলে। সঙ্গী শুধু কিছু প্রাণহীন কাঁচা চিনাবাদাম আর এক বোতল মিনারেল ওয়াটার।
বললাম, মিনারেল ওয়াটার দিয়ে কুলি কর ।
এই রকম মায়াবী রাত খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।
#রাত ১২.৫০.
আঁকাবাঁকা পথে বাড়ির পথ ধরলাম। নদীতে বাঁশের সাঁকো দেওয়া আছে।
সরিষা ফুলের গাছ গুলোকে অনেক টা ভুতুরে লাগছে।
এমন সময়, টলতে টলতে আব্দুল্লাহ বলল,” জীবনের শ্রেষ্ঠ থার্টিফাস্ট নাইট কাটালাম রে বন্ধু!!।”
আজ ২০১৮ সালের প্রথম সকাল।
বিশেষ দিন গুলোতে সাধারনত আমি একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি। কিন্তু আজ উঠতে ইচ্ছা করছে না।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি দেখতে দেখতে সালটাও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেল!
এই ১৮+ সালকে দিয়ে কি কি করানো সম্ভব তাই ভাবতে লাগলাম….
আচ্ছা ১৮ সালের বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়??
আমাদের দেশে তো মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। তাই আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক সালের বিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারি।
কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ল সাল মেয়ে না ছেলে তাই তো জানি না!!
ছেলে হলে তো বয়স এখনো হয়নি তাই এই পরিকল্পনাটা বাদ দিতে হল।
ভাবছি সালটা যেহেতু ১৮+ হয়ে গেছে তাহলে ব্যাটা নিশ্চয় এমন অনেক কিছু করবে যা আগে করেনি!!!
আমার দার্শনিক ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে মা বলল,” উঠে খেয়ে নে”।
আমি ভাত ও ডিম ভেজে চেয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম।
আসতেই মা বলল,”পেঁয়াজ টা কেটে দিস তো”।
পেঁয়াজ টা কেটে দিয়ে রুমে এসে বসলাম।
কিছুক্ষণ পরে আব্দুল্লাহ ফোন দিল।
খাওয়া শেষ করে আমি আর সে দুজন মিলে ইংলিশ মোড়ে গিয়ে মান্টুদার চায়ের দোকানে বসলাম।
মান্টুদা আব্দুল্লাহ কি ধরনের চা খাই তা জানতে চাইল…
আমি কেমন চা খাই সেটা তার জানা।
চাওয়ালা ও মাছওয়ালাদের মস্তিষ্ক কি একটু বেশিই তিক্ষ্ণ হয়!!!?
মাছের বাজারে গিয়ে কখনো মাছওয়ালাদের সাথে হিসাবে পারবেন না…. আপনি যত বড়ই ডিগ্রিওয়ালা হোন না কেন, এটা আমি বাজি ধরে বলতে পারি….
বা একজন চা ওয়ালা অবলিলায় মনে রাখতে পারে কে কেমন চা খাই!!
কিন্তু মজার বিষয় আমাদের দেশে মেধা বিচার করা হয় শুধুমাত্র কে কত পড়া গিলে পরীক্ষার খাতায় উগরে দিতে পারে তার উপর।
অনেক পোলাপানই আছে যারা ছোট বেলা থেকেই ছোটখাট ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ঠিক করে দিতে পারে।
কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে মা-বাবারা বেজার হয়, তারা ভাবে ছেলেকে বানাতে চায় ইঞ্জিনিয়ার আর সে কিনা হচ্ছে ঘড়ি-রেডিও এর মেকার!!!
ফলে ছেলেটা স্কুলে যায় আর পড়া গিলে এবং শেষে দেখা যায় সে পলিটেকনিক পাশ কিন্তু এসি-ডিসি কি তা বুঝেনা!!..
EEE পাশ কিন্তু ছোট্ট একটা সার্কিট তৈরি করতে পারে না!!
অথবা রসায়নে অনার্স কিন্তু f এর সাতটি অরবিটালের
নাম কেন দেওয়া নেই তাই জানে না!!!
তাই আমাদের দেশে সার্টিফিকেটধারী অনেক পাওয়া যায় কিন্তু শিক্ষিত মানুষ পাওয়া যায়না।
কারণ আমরা বাঙ্গালিরা,
“কিভাবে ভুড়ি বাড়াতে হয় এটা জানি কিন্তু কিভাবে পেশি বানাতে হয় তা জানি না”।
চা খাওয়া শেষ হলে আব্দুল্লাহ বলল, জীবনটাই একটা প্যারা রে বন্ধু”।
আমি বললাম, জীবনটা হল একটা নাট্যমঞ্চ রে বন্ধু। এটাকে এতো সিরিয়াসলি নিস না।!!
আসলেই তো আমরা প্রতিনিয়ত একটা নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী। এই নাটক কখন শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কিনা তা হয়ত আমাদের জানা নেই।
কিন্তু কারেক্টার গুলো পাল্টে যায় প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণে।